ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনকাল ৫ আগস্টকে ‘গণজাগরণের উপাখ্যান’ বলে অভিহিত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি একথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা পুরো জাতি এক সঙ্গে এমন একটি দিনকে স্মরণ করছি, যা এদেশের ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখে গেছে। ৫ আগস্ট কেবল একটি দিবস নয়, এটি একটি প্রতীজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান। ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন।’
‘আজ আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এদেশের জনগণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। লাখো প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দি পরেও এদেশের মানুষ সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সংকটময় অধ্যায়, ১৬ বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এদেশের তরুণরা ১৬ বছর ধরে ক্ষোভ-হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। ভাল ফলাফল করেও চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চাকরিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও তদ্বির বাণিজ্য।’
‘যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি, এলাকার মাফিয়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেনি, তার চাকরি হয়নি। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি, যেটা ছিল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আরেকটা হাতিয়ার, এর বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করলেও ফ্যাসিবাদী শাসকের টনক নড়েনি। দীর্ঘ এই সময় প্রতিটি সেক্টরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাবাদী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল, যারা আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধার বিনিময় স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলবে, কাজ করবে। স্বৈরাচারের পক্ষের সঙ্গী হলেই তার কাজ হবে,’ যোগ করেন তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বদলে গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত হয় বলেও জানান ইউনূস।
তিনি তার বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শোক জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের প্রতি জানান গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ জাতির কাছে শপথ নিতে এসেছি। শপথ এই, আমরা কোনো নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। আমরা প্রতিষ্ঠা করব, জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র—এমন রাষ্ট্র, যা সব সময় জনকল্যাণে কাজ করবে। জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের আত্মত্যাগই হবে আমাদের পথ চলার প্রেরণা। তাদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ, এই হোক আমাদের শপথ।’