সাফারি পার্কে ‘দুঃস্বপ্নের ভ্রমণ’

অনিক রহমান
3 Min Read
গাজীপুর সাফারি পার্কে বিকল বাসে অব্যবস্থাপনায় ভ্রমণ হয়ে ওঠে ভোগান্তির। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস
Highlights
  • ‘গাড়িগুলো অধিকাংশ সময়ই রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। এমনকি যান্ত্রিক ত্রুটি সত্ত্বেও ট্রিপ চালু রাখতে চালকদের বাধ্য করা হয়।’

গাজীপুর সাফারি পার্কে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ছুটি কাটানোর আনন্দ মুহূর্তেই আতঙ্কে পরিণত হয় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর।

ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার অদূরের পার্কটি পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বন বিভাগ সেখানে ‘আফ্রিকান সাফারি’ অভিজ্ঞতার আশ্বাস দিলেও, সরেজমিন অভিজ্ঞতায় ফাঁস হয়েছে এর ব্যবস্থাপনা ব্যর্থতা।

প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা হলেও দর্শনার্থীদের বাঘ-সিংহের আবাসস্থলের ভেতর দিয়ে বাসে ভ্রমণের জন্য গুনতে হয় মাথাপিছু দেড়শ টাকা।

স্বপরিবারে শুক্রবার ছুটির দিনে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের লক্কর-ঝক্কর দোতলা বাসে করে সাফারি পার্ক ঘুরিয়ে দেখানোর সময় দেখা দেয় বিপত্তি। হঠাৎ বাসটি বিকল হয়ে পড়লে এর বিপুল সংখ্যক যাত্রী বাঘ-সিংহের আস্তানার ভেতর আটকা পড়েন।

একাধিক দর্শনার্থী জানান, বাস হঠাৎ কালো ধোঁয়া উড়িয়ে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। আর ভ্রমণের খুশি পরিণত বিশৃঙ্খল-আতঙ্কে।

দর্শনার্থী শাকেরা সুলতানা বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও, আমাদের সেখান থেকে নিয়ে যেতে কেউই আসেনি।’

হতভম্ব চালক যাত্রীদের বাস থেকে নেমে যেতে বললেও কেউই এতে সাহস করেননি।

একপর্যায়ে পার্কের পরিদর্শক রাজু মোটরসাইকেলে করে সেখানে আসেন। তবে তাকেও দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি।

পরে একটি ভ্যান এসে শেকল দিয়ে বেঁধে বিকল বাসটিকে টেনে নিতে চেষ্টা করে। শেকল ছিঁড়ে গেলে পরিস্থিতি আরও বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। এর মধ্যে গরমে অতিষ্ঠ শিশুদের অনেকে শুরু করে কান্নাকাটি। দর্শনার্থীদের হট্টগোলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছিল–সাফারি পার্কের পরিচালকরা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় একেবারেই প্রস্তুত নয়।

গাজীপুর সাফারি পার্কে বিকল বাসে অব্যবস্থাপনায় ভ্রমণ হয়ে ওঠে ভোগান্তির। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

এনাবুল করিম নামে এক দর্শনার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অনেক তর্ক-বিতর্কের পর পরিদর্শক রাজু আটকে পড়া দর্শকদের একটি ছোট বাসে গাদাগাদি করে ফেরত পাঠান।

‘আমরা শুধু মরতে চাইনি বলে সব মেনে নিতে বাধ্য হই। এটি ছিল পার্ক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার চরম উদাহরণ’, বলেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাস চালক বলেন, ‘গাড়িগুলো অধিকাংশ সময়ই রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। এমনকি যান্ত্রিক ত্রুটি সত্ত্বেও ট্রিপ চালু রাখতে চালকদের বাধ্য করা হয়।’

ওই ঘটনা পার্কের নিরাপত্তা নীতি, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মীদের প্রশিক্ষণকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, তিনি অভিযোগটি আমলে নিয়ে প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে পাঠিয়েছেন।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আশা করি, তিনি পার্কের যানবাহনের সেবা নিশ্চিত করবেন ও দায়ী কর্মীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।’

‘আশা করছি, এতে আমাদের পরিষেবা উন্নত হবে,’ যোগ করেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *