গোপালগঞ্জে হামলা-সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা কারফিউ শিথিলের পর ১৪৪ ধারাও প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রোববার রাত আটটার পর গোপালগঞ্জ জেলায় ১৪৪ ধারা ও কারফিউ বলবৎ থাকবে না। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে, কারফিউ শিথিলের পর গোপালগঞ্জে জারি হয় ১৪৪ ধারা। সেখানে কার্যত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু হয়নি। জেলার সর্বত্র থমথমে পরিবেশ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হচ্ছেন না, যানবাহন চলছে সীমিত পরিসরে।
স্থানীয় জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শনিবার রাতে ১৪৪ ধারা জারি করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে জেলার যেকোনো স্থানে যেকোনো ধরনের সভা, মিছিল বা জনসমাবেশ করা যাবে না এবং একসঙ্গে একাধিক লোক ঘোরাফেরা করাতেও বিধিনিষেধ থাকবে।
তবে, পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, জরুরি সেবা ও সরকারি অফিস ১৪৪ ধারার আওতামুক্ত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এর আগে, ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন নিহত হন। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
নিহতরা হলেন-গোপালগঞ্জ পৌরসভার উদয়ন রোডের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা (২৫), জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোহেল রানা মোল্লা (৩৫), কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি ইউনিয়নের হরিণাহাটি গ্রামের রমজান কাজী (১৭), ভেড়ার বাজার ব্যাপারীপাড়া এলাকার ইমন তালুকদার (১৮) ও থানাপাড়া এলাকার রমজান মুন্সী (৩৫)।
এর মধ্যে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোহেল হত্যা হামলার বাদী এসআই আবুল কালাম আজাদ, দীপ্ত সাহা হত্যা মামলার বাদী এসআই শামীম হোসেন, ইমন হত্যা মামলার বাদী এসআই শেখ মিজানুর রহমান। এই তিন হত্যা মামলার প্রতিটিতে অজ্ঞাতনামা দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পরে পরিস্থিতি অবনতির কারণে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রথম দফায় কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত করেন। এর মধ্যে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় কারফিউর মেয়াদ বাড়িয়ে গতকাল সকাল ছয়টা পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়। এরপর ১৪ ঘণ্টা শিথিল রেখে রাত আটটা থেকে রোববার সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়।