জুলাই গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানির সূচনা বক্তব্যে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘নির্মম নিষ্ঠুরভাবে বিচার করতে চাই না, আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার শেষ করতে চাই। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচার জন্ম হয়নি।’
রোববার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালতের অনুমতিতে শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। মামলার প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, এদিন জুলাই আন্দোলনে আহতরা সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ইতিহাসে অনেক স্বৈরাচার জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা শুধু একাই পালাননি, তার মন্ত্রীবর্গসহ পালিয়ে গিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন।’
‘স্বৈরাচারদের সমিতি করা হলে, শেখ হাসিনা সভাপতি হতে পারেন। মিথ্যার পিএইচডি করা জন্য হিটলারও হয়তো তার কাছে আসতেন। আমাদের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই। আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে এসেছি। আমরা ন্যায়বিচার চাই, দেশের মানুষের স্বপ্নের বিচার চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাইবো, ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাইবো। যুগ সন্ধিক্ষণে ন্যায়বিচারের জন্য দাঁড়িয়েছি। শুধু রাষ্ট্রপক্ষ নয়, সকলে ন্যায়বিচার পাবেন,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আগামী জন্য এমনভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এখানে আর খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। আমাদের ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই, অপরাধের বিচার চাইতে এসেছি। অপরাধী এখানে ব্যক্তি, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলের বিচারও হতে পারে। আবু সাঈদ যে বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়ে গেছে, এই বিচার হবে সে বাংলাদেশের ভীত।’

রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর তিন সদস্যের বেঞ্চে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। ট্রাইব্যুনালের সভাপতিত্ব করছেন বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর অনুমতি সাপেক্ষে এই বিচার কার্যক্রম রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
এর আগে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে ন্যায়বিচার কামনায় ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দেন।
বিচারিক কার্যক্রমে প্রসিকিউশনের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত রয়েছেন। মামুন এদিন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামুনের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদনও একই দিনে মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল।