স্বাধীনতা চাইলে সংবাদমাধ্যমকে জবাবদিহি করতে হবে: মাহফুজ আলম

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সম্মাননা তুলে দিচ্ছেন তথ্য উপদেষ্টা। ছবি : পিআইডি

সংবাদমাধ্যমে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি হলে এর ওপর দেশের মানুষের আস্থা ফিরবে বলে মনে করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যম স্বাধীনতা চাইলে তাকে জবাবদিহি করতেই হবে।

রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার ও আহত এবং সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘মিডিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমকে হতে হবে জবাবদিহিমূলক। সংবাদমাধ্যম যদি স্বাধীনতা চায়, তাকে জবাবদিহি করতেই হবে। যারা ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারের দালালি করেছে, তাদের কেউ জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি।’

সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সংবাদমাধ্যমকে কিছু প্রচার করতে বাধ্য করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে গত ছয় মাসে দেশের অনেকগুলো  হাউজ গণ-অভ্যুত্থানের  চেতনা ও ঐক্যকে  ভন্ডুল করতে কাজ করেছে।’

মাহফুজ আলম বলেন, ‘দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ। জনগণের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’

মাহফুজ আলম বলেন, ‘কারফিউর সময়ে যে সাংবাদিকতা, বিশেষ করে টেলিভিশনের সাংবাদিকতা, আপনারা জানেন খুবই একপাক্ষিক ছিল। একটা রিলস বারবার দেখানো হচ্ছিল। বিটিভির ওখানে ‘পুড়ে গেছে সব’, ‘সব ধ্বংস’, ‘আগুন সন্ত্রাস’। হাসিনা যা বলত, ওই কথাগুলো বারবার টিভিতে দেখানো হচ্ছিল।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু নতুন বাংলাদেশ এক বছরেই বা দুই বছরে সম্ভব না। বরং এটা যদি অব্যাহত লড়াই থাকে তাহলে সম্ভব।’

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ফ্রন্টলাইন সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ছিল বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সেরা সময়। আবার গত বছরের জুলাইয়ে আমরা সবচেয়ে খারাপ সাংবাদিকতাও  দেখেছি।’

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে গত বছরের জুলাই মাসকে সেরা এবং সবচেয়ে ভয়াবহ সময় হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকদের একটি অংশ ক্ষমতার লোভে সাংবাদিকতা থেকে বিচ্যুত হয়েছে, কিন্তু ফ্রন্টলাইনের সাংবাদিকরা তাদের জায়গা ছাড়েনি। বিপ্লবটা সফল হয়েছে মাঠের সাংবাদিক, মফস্বলের সাংবাদিক, যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন তাদের জন্য।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ধারণকারী সাংবাদিক তাওহীদুল হক সিয়াম এবং দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক ইমরান হোসেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননার পাশাপাশি আর্থিক সম্মানি হিসাবে মোট ৫৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *