সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যায় জড়িত ছিলেন দুজন। এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত খুন। তবে ডিএনএ বিশ্লেষণে অস্পষ্টতার কারণে খুনি দুজনকে এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘ ১২ বছর পর আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যা মামলায় গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্য উঠে এসেছে নতুন টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে।
সম্প্রতি হাইকোর্টে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হত্যার রাতে রান্নাঘরের ছুরি ও বটি ব্যবহার করে সাগর-রুনিকে খুন করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টে চেতনানাশক বা বিষাক্ত কোনো উপাদানের অস্তিত্ব মেলেনি। হত্যার আগে তারা আহত অবস্থায় কিছু সময় বেঁচে ছিলেন। সেদিন বাসায় আগে থেকে কেউ ছিলেন না এবং বাইরের কেউ জোর করে ঢুকেছে এমন প্রমাণও মেলেনি।’
প্রতিবেদন অনুসারে, ‘হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে। প্রথমে খুন হন রুনি, পরে সাগর। ধারণা করা হচ্ছে, সাগর বাধা দিতে পারেন—এমন আশঙ্কায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। অন্যদিকে, নারী হিসেবে দুর্বল ভেবে রুনির হাত-পা বাঁধার প্রয়োজন দেখা দেয়নি।’
‘ঘটনাস্থলে পাওয়া চারটি ডিএনএ নমুনার মধ্যে দুটি সাগর ও রুনির, অন্য দুটি এক নারী ও এক পুরুষের। তবে পরে বিশ্লেষণে ৫-৬ জনের ডিএনএ মিশ্রণ থাকায় কারো পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ– সিআইডির সহায়তায় পরিচালিত পরীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, ‘তিনজনের বেশি হলে শনাক্তকরণ জটিল হয়ে পড়ে। ঘটনার পরদিন সকালে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পৌঁছানোর আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়দের চলাচলে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবুও রান্নাঘরের বারান্দায় ভাঙা দেওয়ালের অংশটি ছিল সদ্য ভাঙা, যা দিয়ে সহজেই কেউ আসা-যাওয়া করতে পারে।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ ভাড়া বাসায় সাগর-রুনি খুন হন। রুনির ভাই নওশের আলম পরদিন শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। এরপর দীর্ঘদিন মামলাটি র্যাবের অধীনে থাকলেও কার্যকর কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হাইকোর্ট নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
এ পর্যন্ত হত্যার মোটিভ ও জড়িতদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা না গেলেও, নতুন তথ্য-প্রমাণ আলোচনায় নতুন মোড় তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই হত্যা মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছ থেকে সরিয়ে একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে পিবিআই প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠিত হয়, যেখানে সিআইডি, পুলিশ এবং র্যাবের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
এই টাস্কফোর্সকে এ বছর ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। এ পর্যন্ত তারা নতুন করে সাতজন সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ কর।
প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আরও ছয় মাস সময় দিয়েছে তদন্ত শেষ করতে। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ এবং রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।