দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি থাকা এই প্রাবন্ধিক এর মরদেহ উদীচীর ময়মনসিংহ কার্যালয়ে নেওয়া হবে। তবে শেষকৃত্যের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পরিবার।
যতীন সরকারের ছেলে সুমন সরকার জানান, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরেই বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যা ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন। জুনে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য তার বেশ কিছু অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাকে ময়মনসিংহে মেয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আবার অসুস্থ হলে ঢাকায় একটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সম্প্রতি আবার অধ্যাপককে ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করার পর ২০০২ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে নেত্রকোনায় ফিরে যান তিনি। তারপর থেকে সেখানেই নিজের বাড়িতেই থাকছিলেন তিনি।
যতীন সরকারের লেখা বইগুলোর মধ্যে সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন উল্লেখযোগ্য।