বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে গতিশীল করতে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, এক্ষেত্রে আসিয়ানে মালয়েশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গ উঠে আসে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবং আসিয়ান নেতৃত্বের কারণে মালয়েশিয়ার একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে। এই দেশটি আঞ্চলিক সমাধানের জন্য কার্যকরভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’
‘আমরা আশা করছি মালয়েশিয়া আলোচনায় প্রভাব ফেলবে যাতে আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারি,’ যোগ করেন তিনি
ইউনূস সতর্ক করে বলেন, ‘রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর সংঘাতে নতুন করে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে।’
‘গত ১৮ মাসে নতুন করে এক লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে, এর সঙ্গে আগে থেকে থাকা ১২ লাখ যোগ হয়েছে। সংকট পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষণাবেক্ষণের সব তহবিল বন্ধ করেছে,’ বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি এ মাসের শেষে কক্সবাজারে (বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয়ের আট বছর পূর্তির দিনে), দ্বিতীয় বৈঠক হবে সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে, আর তৃতীয়টি বছরের শেষে কাতারের দোহায়।
২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ মানবিক সংকট শুধু বাংলাদেশ নয়, আসিয়ানের আরও কয়েকটি দেশ—মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াকেও প্রভাবিত করছে।
মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ প্রোটোকলে স্বাক্ষরকারী নয়। তবুও দেশটি মানবিক বিবেচনায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াও একইভাবে সীমিত সহায়তা দিচ্ছে। তবে এ দেশগুলো বারবার বলেছে, আন্তর্জাতিক সমাধান ছাড়া এ সংকট দীর্ঘায়িত হবে।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত; সে বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা দমন-পীড়নের পর কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
এরপর থেকে কক্সবাজার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বারবার বলছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা দরকার।