রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিলে সবার জন্য মঙ্গল: খলিলুর রহমান

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ছবি: সংগৃহীত

আগামী সপ্তাহে কক্সবাজারে হতে যাওয়া সম্মেলন রোহিঙ্গাবিষয়ক সমস্যার স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে পাওয়ার বড় সুযোগ বলে মনে করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তার মতে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা গেলে তা সবার জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে।

২৫ আগস্টের এই সম্মেলনটি মূলত আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের উদ্যোগে হতে যাওয়া বৃহত্তর সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশবিশেষ।

সম্মেলনের বিষয়ে রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কূটনৈতিকদের ব্রিফ করেন খলিলুর রহমান। এরপর কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এ সমস্যার একটি স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে বের করার পথনির্দেশিকা দেওয়ার একটি বড় সুযোগ। এই কারণে রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর, তাদের কথা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের স্বপ্নগুলোকে সে সম্মেলনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চলছে।’

মিয়ানমারের এই নাগরিকদের নিয়ে যে সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার স্থায়ী সমাধান বা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ চলছে জানিয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে যে, আমরা এই সমস্যাটির একটি আশু এবং স্থায়ী সমাধান চাই। আপনি আন্তর্জাতিক সাহায্য দিয়ে কতদিন রাখবেন, তাদের তো বাড়ি ফিরতে হবে। সেটাই তো আসল কথা ‘

বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাহায্য ইম্পর্টেন্ট। কারণ সেটা যদি কমে যায়, নানা ধরনের মানবিক সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। তো সাহায্য যাতে অব্যাহত থাকে, সে প্রচেষ্টা তো আমরা সবাই মিলে করছি এবং কিছু কিছু দাতা দেশ থেকে কিছু উদ্যোগের নিশানা পাচ্ছি।’

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিলে সবার মঙ্গল জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপদেষ্টা পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যখন ফিরে যাবেন, তাদের ভূমি অত্যন্ত উর্বর; তাদের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। আমরাই তো তাদের কাছ থেকে শস্য কিনতাম একসময়। পৃথিবীর কোনো প্রয়োজন তাদের কাছে নাই। তো তাদের ফিরিয়ে দিলে সবার জন্য মঙ্গল।’

একসময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক আলোচনার এজেন্ডা থেকে প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বানে তাৎক্ষণিকভাবে ও সর্বসম্মতিক্রমে সাড়া পাওয়া যায় এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের ১০৬টি দেশ এই সম্মেলনকে স্পন্সর করেছে। এখন যথেষ্ট পরিমাণ আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে।’

বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চললেও ঢল নামে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট।

এরপর কয়েক দফায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকেই এসব এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রয়োগ করা হয় আন্তর্জাতিক চাপও। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।

প্রত্যাবাসনের জন্য বেশ কয়েক দফায় উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় সেই উদ্যোগ বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়নি। তাছাড়া মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল এবং সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধও এই কার্যক্রমকে পিছিয়ে দেয়।

এর মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

সবশেষ গত ১৪ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কষ্ট নিজের চোখে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনিও প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *