২২ শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সাহিত্যের এই মহান পথিকৃত। দিনটিকে উপলক্ষ করে দেশজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে নানা শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ, ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট, ৮০ বছর বয়সে মারা যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করছে আলোচনা সভা, সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও রবীন্দ্র-স্মৃতিচারণ।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শ্রদ্ধানুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজন করা হয়েছে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠান।
১৮৬১ সালের ৭ মে (২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কবিগুরু। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবীর চতুর্দশ সন্তান হিসেবে তিনি ছিলেন পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য।
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রায় প্রতিটি ধারায় রেখেছেন অমোচনীয় ছাপ। কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের সব শাখায় ছিল তার স্বতন্ত্র ও গভীর উপস্থিতি। রচনা করেছেন প্রায় দুই হাজার গান, যা ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’ নামে একটি স্বতন্ত্র ঘরানায় প্রতিষ্ঠিত।
তার সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে আটটি উপন্যাস, ৮৪টি ছোটগল্প, অসংখ্য কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ। প্রায় সাত দশকের সাহিত্যজীবনে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলা সাহিত্যের অনন্য এক প্রবাদপুরুষ।
শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যে এই প্রথম নোবেল এনে দিয়ে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বাংলা সাহিত্যকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুটি দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন- বাংলাদেশের ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ভারতের ‘জন গণ মন’।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গান ছিল বাঙালির সাহস ও প্রেরণার উৎস। বাঙালির হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজও এক অনন্ত আলো, যিনি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ঐতিহ্যের এক অবিনাশী প্রতীক।