বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের (আরএমজি) রপ্তানিকারকরা আশা করছেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবং নতুন শুল্ক কাঠামো বাজার শেয়ার বাড়াতে সহায়ক হলে আসছে বছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা হবে সর্বকালের সর্বোচ্চ।
শিল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর ৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলেও সেটি হবে একটি নতুন রেকর্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা) এর তথ্য মতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুনে আমেরিকার পোশাক আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৫৪৭ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার এবং এটা জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৩ দশমিক শূন্য ৮ মিলিয়ন ডলারে, যা ৩২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যদি এই গতি অব্যাহত থাকে, এ বছর ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের আরএমজি রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এমনকি ৮ বিলিয়ন ডলার হলেও সেটি হবে রেকর্ড।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অর্জন করতে হলে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, ব্যাংক ও কাস্টমস থেকে আরও ভালো সহযোগিতা প্রয়োজন।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে।
ওটেক্সা’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, যেখানে ভিয়েতনামের বৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ভারতের ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। চীন থেকে আমদানি অনেক কমেছে, ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
সম্প্রতি, ৭ আগস্ট, নতুন ২০ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পর বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়ে ভালো অবস্থানে এসেছে। এর ফলে চীন ও ভারত থেকে সরে আসা অর্ডার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যাদের ওপর যথাক্রমে ৩৫ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই এ বছর আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে।’
এ ব্যাপারে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা কমার ঝুঁকি আছে। তবে প্রতিযোগীদের কাছ থেকে বাজার শেয়ার বাড়িয়ে বাংলাদেশ এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম।’
রপ্তানিকারকরা জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি নতুন শুল্কের খরচের প্রভাব কিছুটা পুষিয়ে দিতে সহায়তা করবে। কারণ, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়াচ্ছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মতো নয়, যারা দেশীয় তুলার ওপর নির্ভর করে, বাংলাদেশ তুলার অধিকাংশই আমদানি করে। বর্তমানে ভাল দামের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের কমপক্ষে ২০ শতাংশ মার্কিন উৎসের উপকরণ দিয়ে তৈরি হলে সেই অংশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক মওকুফ হবে।
শাহা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে তৈরি একটি ১০ ডলারের শার্টে যদি ২০ শতাংশ মার্কিন তুলা থাকে, তাহলে শুল্ক শুধু ৮ ডলারের অংশের ওপর প্রযোজ্য হবে।’
অনেক স্থানীয় রপ্তানিকারক ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মার্কিন তুলা ব্যবহার করছেন, যা মার্কিন ক্রেতাদের জন্য অতিরিক্ত খরচ কিছুটা এড়াতে সহায়ক হচ্ছে, যোগ করেন তিনি।