‘মোবাইল চুরি থেকেই মুরাদনগরে তিন খুন’

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read
মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড। ছবি: টাইমস
Highlights
  • ‘ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো যোগসাজস আমরা পাইনি। মোবাইল চুরি, থানায় অভিযোগ করা নিয়েই এ ঘটনা ঘটে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল কার্যক্রম চলমান আছে। যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার, অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ী গ্রামে মা, ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সালিশে বিরোধ থেকেই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে র‍্যাব। এতে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি।

র‌্যাবের ভাষ্য, মোবাইল চুরির অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে মারধর করার পর থেকে ‘নিখোঁজ’ হন বোরহান নামে রুবির প্রতিবেশী এক যুবক। এর প্রেক্ষিতে বোরহানের বাবা জসীম বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি অভিযোগ করেন। এর পেছনে রুবির ভূমিকা থাকতে পারেন ধারণা করেই সালিশে যুক্তরা পরিকল্পনা করে সেদিনের হামলা চালায়।

স্থানীয়দের দাবি, নিহত পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তবে, পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে একটি বাড়িতে মাদক কারবার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে কিছু লোক হামলা চালিয়ে ওই গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তার ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হয়েছেন রুবির মেয়ে রুমা আক্তার (২৮)। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার রাতে নিহত রোকসানা বেগম রুবির মেয়ে রিক্তা বেগম বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় ৩৮ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ফলে শুক্রবার রাতে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মামলার ৩ নম্বর আসামি বাচ্চু মিয়া (৫৫), ৫ নম্বর আসামি রবিউল আওয়াল (৫৫), ৩৩ নম্বর আসামি দুলাল (৪৫) ও তাদের সঙ্গে ঘটনায় ‘জড়িত’ আতিকুর রহমান (৪২), বায়েজ মাস্টার (৪৩) ও আকাশ (২৪)। এর আগে শুক্রবার রাত কুমিল্লার মুরাদনগরের আকবপুর এলাকা থেকে সবির আহমেদ (৪৮) ও মো. নাজিমউদ্দীন বাবুল (৫৬) নামে দুইজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে সেনাবাহিনী।

ছয়জনকে গ্রেপ্তারের বিষয় জানাতে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত হয় ১ জুলাই একটি মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে। বোরহান নামে একজন স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষকের একটি মোবাইল চুরি করেন। সেই ঘটনাকে নিয়ে এলাকায় চোরকে মারধর করা হয়। সেটাকে নিয়ে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করেই পরের ঘটনা।’

‘এলাকাবাসী লোকজন ধরে বোরহানকে অনেক মারধর করে, মারধর করার পরে তার বাবাকে খবর দেওয়া হয়। এখন এই বোরহান কোথায় সেটার ট্রেস এখনো নেই,’ যোগ করেন তিনি।

এর প্রেক্ষিতে বোরহানের বাবা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বোরহানের বাড়ি রুবির মেয়ে নিহত জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের বাড়ির পাশে। এ হিসেবে বোরহানের বাবা রুবির কাছে সাহায্য চান যখন বোরহান চুরি করার পর ধরা পড়ে।’

পরে বোরহানকে যখন পাওয়া যাচ্ছে না, সাহায্য চাওয়া হলে রুবিও বিষয়টার সঙ্গে যুক্ত হন। বাচ্চু মেম্বারের নেতৃত্বে চুরির  ঘটনাকে সালিশের মাধ্যমে নিস্পত্তি করা হয়। সেহেতু বাচ্চু মেম্বার ও বরিউলসহ চরজনের বিরুদ্ধে বোরহানের বাবা জসীম অভিযোগটি করেন। ফলে যারা সালিশ করেছে তারা ক্ষিপ্ত হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২ জুলাই বিষয়টা সালিশ করে নিস্পত্তি করার চেষ্টা করা হয়। গ্রাম পর্যায়ে একটা মিটিংও করা হয়। কিন্তু নিস্পত্তি হয় না। পরে রাতে একটা পরিকল্পনা করা হয় যে, রুবি আক্তারের পরিবারকে শায়েস্তা করা হবে।’

রাতে রুবির ছেলে রাসেলকে ফোন করে ‘তোর বংশ নির্বংশ’ করে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ৩ জুলাই সকালে এলাকার চেয়ারম্যানসহ আরও কিছু ব্যক্তি বাচ্চু মেম্বর, রবিউল ভোরে আসেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ বলেন,  ‘সকালে একটা জমায়েত হলে রুবি ও তার মেয়েকে ডাকা হয়, বাগবিতণ্ডা একপর্যায়ে তাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়। হাতাহাতির ঘটনা থেকে এই ন্যক্যারজনক ঘটনা ঘটে।’

নিহত রুবির নামে ১১টা ও ছেলে রাসেলের নামে ৯টা মামলা রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো যোগসাজস আমরা পাইনি। মোবাইল চুরি, থানায় অভিযোগ করা নিয়েই এ ঘটনা ঘটে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল কার্যক্রম চলমান আছে। যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার, অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

তবে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ঘটনার  সঙ্গে জড়িত তারাই এলাকা থেকে গিয়েছে। যাদের সম্পৃক্ততা নেই, তাদের এলাকা ছাড়ারতো প্রশ্নই আসে না।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *