সীমান্ত, বাণিজ্য, আঞ্চলিক প্রভাব, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ইস্যুসহ নানা বিষয়ে বৈরিতা ভুলে পারস্পারিক আস্থা, বিশ্বাস ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গভীর করার আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছে ভারত ও চীন।
চীনের বন্দর নগরী তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠকে এ আশা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়, সাত বছর পর চীন সফর করছেন ভারতীয় সরকার প্রধান। চীনের প্রেসিডেন্ট শি রোববারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বলেন, ‘চীন ও ভারত কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং হল সহযোগিতার অংশীদার (কোঅপারেশন পার্টনারস)।’
‘কেউ কারও জন্য হুমকি নয়, বরং উভয়েই পরস্পরের সহযোগিতায় উন্নয়নের শিখরে পৌঁছানোর বিশ্বস্ত মাধ্যম’, বলেন শি জিনপিং।
‘কৌশলগত দৃষ্টিকোণ ও দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্ক বজায় রাখার মানসিকতা নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় পরস্পরের বন্ধু হওয়াটাই সঠিক পছন্দ হবে’, মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘দুই দেশই বৈরিতা ভুলে “শান্তি ও স্থিতিশীলতার” দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
দুই নেতা জানান, ‘শিগগিরই দুদেশের মধ্যে ফের সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে।’

২০২০ সালে গালওয়ান ভ্যালিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় ভারত ও চীনের সেনারা। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।
সেইসঙ্গে ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা চীনের তিব্বতে কৈলাস ও মানসরোবারে যাওয়ার যে অনুমতি পেতেন, তা আরও বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন মোদী।
করোনা মহামারির সময় থেকে ভারতীয়দের জন্য তিব্বতে যাওয়ার পথ বন্ধ ছিল। তবে এবছর থেকে তীর্থযাত্রীদের ফের ভিসা দিচ্ছে বেইজিং।
ভারতও সম্প্রতি চীনের নাগরিকদের জন্য আবারও পর্যটক ভিসা চালু করেছে।
সাংহাইয়ের তিয়ানজিনে এবারের এসসিও জোটের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়াঁসহ ২০জনেরও বেশি বিশ্বনেতা।
তবে সম্মেলনের মূল আকর্ষণ ধরে রেখেছে ভারত-চীন-রাশিয়ার ত্রিপাক্ষিক সমীকরণ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও শুল্কযুদ্ধে জড়িয়েছেন। রাশিয়ার থেকে জ্বালানি তেল কেনার ‘শাস্তি’ হিসেবে ‘বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত নরেন্দ্র মোদীর অনুরোধ আগ্রাহ্য করে ভারতের ওপর বসিয়েছেন অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নীতির কারণে ট্রাম্পসহ-পশ্চিমা নেতাদের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন পুতিনও।
আর ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নিয়েই চীনের সঙ্গে জড়িয়েছেন বাণিজ্য যুদ্ধে।
মার্কিন-ভারত টালমাটাল সমীকরণে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিকল্প খুঁজে নিতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছেন চীনের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।