নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও আলাদা করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া সাম্প্রতিক রায়কে কার্যকর ও বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক বলে মনে করে জনতা পার্টি বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার দলের নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন এবং মহাসচিব শওকত মাহমুদের পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়।
বিবৃতিতে তারা এই রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠনের নির্দেশনা এই রায়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কালবিলম্ব না করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন অরাজনৈতিক সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিচার বিভাগের ওপর সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা।’
এর আগে মঙ্গলবার এক রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত হবে। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে এ রায় দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। রায় ঘোষণার পর আদালত এ আশাও ব্যক্ত করে যে, বিচার বিভাগ শুধু কাগুজে স্বাধীন হবে না। সত্যিকার স্বাধীনতা এর কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে উপস্থিত হবে।
বহুল প্রত্যাশিত রায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়াহীনতায় জনতা পার্টি বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘কেননা ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতে বিচার বিভাগীয় সংস্কারের সুপারিশমালা সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তুলনামূলক উদাসীনতা লক্ষণীয়।’
যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংবিধানের ২২, ১০৭ ও ১০৯ অনুচ্ছেদ এবং মাসদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনা উদ্ধৃত করে হাইকোর্ট এই রায় বলেছেন, আলাদা বিচার বিভাগ সাংবিধানিক অধিকার। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব আরোপ করা হয়েছিল। পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের সঙ্গে পরামর্শের বিধান সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে নির্বাহী বিভাগের চাওয়া পাওয়া এবং দলবাজিই প্রাধান্য পেয়ে আসছিল। বিচারপতি নিয়োগ, অধঃস্তন আদালতগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বৈষম্যমূলক বিচার ব্যবস্থা তৈরি করেছিল।’
‘এরপর বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় প্রধান বিচারপতিকে হেনস্তা, মর্জিমতো রায় বদল, ভিন্ন মতের রাজনীতিকদের ওপর জুলুম, দলীয় বিচারকদের মাস্তানি রাষ্ট্রে এক ভয়ানক অবস্থা তৈরি করেছিল। উচ্চ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা, আনিসুল হক, খায়রুল হক, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকেরা বিচার অঙ্গনে নৈরাজ্য কায়েম করেছিল।’
প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্প উল্লেখ করে বিবৃতিতে জনতা পার্টি বাংলাদেশের দুই নেতা বলেন, ‘তাদের দল মনে করে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারিক পরিমণ্ডলকেও সেভাবে তৈরি করা বাঞ্ছনীয়। এখনো বিচার বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত বা স্বৈরাচারদের দোসরমুক্ত নয়। বিচারপ্রার্থী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা করা, বিচার প্রত্যাশী মানুষের স্বল্প ব্যয়ে বিচার পাবার পথ প্রশস্ত করা। বিচার অঙ্গনকে হয়রানি মুক্ত করা। সর্বোপরি বিচার বিভাগীয় সংস্কারের সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’
‘গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ’ এই স্লোগান নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’। এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।