বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না দাবি করে তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তিনি বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। আর এই বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছও ছিল না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষে এসব দাবি করেন ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ও বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ডানিয়া খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। ১৯৭১ সালে বাবা পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ছিলেন। অথচ তার নামে যুদ্ধাপরাধের মামলা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাবার সঙ্গে বড় অন্যায় করেছেন শেখ হাসিনা।’
বিএনপির সাবেক নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। যিনি সাকাচৌ নামে পরিচিত ছিলেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১০১২ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিন নুতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বোয়ালখালীর শাখাপুরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা ও ৭৬ জনকে হত্যা, রাউজানের গহিরায় গণহত্যার মতো অভিযোগ।
মোট নয়টি মামলায় দোষী প্রমাণের পর ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেয়। ২০১৫ সালেল ২২ নভেম্বর তার দণ্ড কার্যকর করা হয়।
ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘তার বাবার পক্ষে সাক্ষী দিতে চারজন ব্যক্তি বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সেটাও নাকচ করে দেন। তারা ছিলেন, মুনীম আরজুমান খান, আমবার হারুন সাইগেল, ইশহাক খান খাগওয়ানি ও নিয়াজ আহমেদ নূর। এই চারজন ব্যক্তি পরবর্তিতে ইউটিউবের মাধ্যমে নিজেরা তাদের এভিডেন্স দিতে চেয়েছিলেন সেটা পাবলিশ করে দেন।’
এই চারজন সাক্ষ্য দিলে প্রমাণ হতো যে ১৯৭১ সালে সাকা চৌধুরী পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিলেন, দাবি হুম্মামের।
হুম্মাম বলেন, ‘এই নামগুলো বলার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ফরেন মিনিস্ট্রি তাদের বিদেশি দূতাবাস যেগুলো আছে সেখানে যখন কোনও ম্যাসেজ পাঠানো হয় সেগুলোকে সাইফার বলা হয়। সেই সাইফার ম্যাসেজগুলোকে বেশিরভাগ সময় কোডেড সিক্রেট থাকে। এটার একটি সাইফার মেসেজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এতে এই চার জনের নাম উল্লেখ করে বলা আছে যে, কোনোভাবে তাদেরকে যেন ভিসা না দেওয়া হয়।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর দাবি, তার বাবার সঙ্গে ন্যায় বিচার হয়নি। তিনি বিচারিক হত্যার শিকার হয়েছেন। আর এই হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত আওয়ামী লীগ সরকার।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার একটাই লক্ষ্য ছিল তার বিরোধীদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষকে সম্পূর্নভাবে গুম, খুন, হত্যা করে চিরকাল ক্ষমতায় টিকে থাকা। বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও ছিলেন শেখ হাসিনার আক্রোশের স্বীকার।’
যেসব গোপন বার্তার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাক্ষীদের ভিসা দেয়নি সেগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হবে বলে জানান হুম্মাম। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবাই আমাদেরকে এই হত্যার ন্যায়বিচার পেতে সহযোগিতা করবেন।’
শেখ পরিবার ও চৌধুরী পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকার পরও কেন সাকা চৌধুরী বিচারিক হত্যার শিকার হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে হুম্মাম বলেন, ‘নামটা অনেক বড় ছিল যে! সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নামটা বড় এটা শেখ হাসিনার সহ্য হচ্ছিল না। জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের মধ্যে আমার বাবার নামটা অনেক বড় ছিলো। বাবাকে শেখ হাসিনা চাইলে হয়ত একটা গুলিতে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু এটা তার লক্ষ্য ছিল না। তার লক্ষ্য ছিল আব্বার যে রাজনীতিটা আছে সেটাকে ধবংস করে দেওয়া। আব্বা একজন ন্যাশনালিস্ট হিসেবে পরিচিতি ছিলেন।’