ফেনী ও নোয়াখালীতে বৃষ্টি থামলেও বেড়েছে দুর্ভোগ। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। সারাদেশের বিভিন্ন নদ-নদীর বাঁধে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। টাইমস অব বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন:
ফেনী: ফেনীর আকাশে রোদের দেখা গেলেও দুর্ভোগ কমেনি। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম। ফুলগাজী ও পশুরাম উপজেলা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরে তারা কর্দমাক্ত ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। ফেনী থেকে ফুলগাজী পর্যন্ত যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। এখনো পরশুরাম সড়ক বন্ধ রয়েছে। যেসব এলাকা থেকে পানি সরে গেছে সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে।
রান্না করতে গিয়ে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৪৮) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছেন। শুক্রবার বিকেলে ফেনীর পরশুরাম পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রোকেয়া আক্তার রিনা ওই গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তিনি এক ছেলে, দুই কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বিষয়টি জানিয়েছে ।
জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, এখনো সাড়ে ৪ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরেছে। ৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু রয়েছে। উপজেলাগুলোতে ১৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ২ হাজার ২০০ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
৭২ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আশা
ফেনী জেলার সেলোনিয়া ও মুহুরী নদীর পানি কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৭২ ঘণ্টায় ফেনী জেলার মুহুরী ও সেলোনিয়া নদীর পানি সমতলে হ্রাস পেতে পারে ও ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী ৩ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নদ-নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন এই দুই নদীর পানি কমতে পারে। একই সঙ্গে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

নোয়াখালী: জেলায় জলাবদ্ধ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে।
শনিবার সকাল থেকে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের বিভিন্নস্থানে খুব ধীর গতিতে পানি কমছে। বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব ও এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।’
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি গ্রামে পানি বাড়ার বিষয়ে আমার জানা নেই।’
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েকশ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় এলাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শত শত পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো টেকসই কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা।
ধরলার স্রোতের তীব্রতায় প্রতিদিনই নদীতে গাছপালা, পাকা ঘরবাড়ি এবং জমিজমা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আগেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ আবার অস্থায়ীভাবে অন্যের জমিতে বসতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
শরীয়তপুর: জেলার সদর উপজেলার পদ্মাসেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সংলগ্ন মঙ্গলমাঝির ঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের ফলে ধস নেমে প্রায় ১ কিলোমিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মাদারীপুর: জেলার শিবচরের আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মিত ‘লিটন চৌধুরী’ সেতুর নদী শাসন বাঁধ না থাকায় বর্ষার শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেতুর খুব কাছেই নদের পাড়ে ভাঙন শুরু হওয়ায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জায়গা ভেঙে নদী গর্ভে চলে গেছে। সেতুর একটি পিলার থেকে একশত ফুটেরও কম দূরত্বে এই ভাঙন শুরু হয়েছে।