যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আবারও বাণিজ্য বিরতিতে সম্মত হয়েছে। বাড়তি শুল্কহার কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এই দুই দেশ আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এ বিরতির সময় বাড়িয়েছে।
সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দু’টি জানিয়েছে, এ বছরের শুরুর দিকে পারস্পরিক পণ্যে ঘোষিত তিন অঙ্কের শুল্ক আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। এদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শুল্ক বিরতি বাড়ানোর এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।
উভয় পক্ষই জুলাই মাসে শেষ হওয়া গঠনমূলক আলোচনায় বাণিজ্যের ভারসাম্যতা নিরসনে এ পদক্ষেপের পক্ষে মত দিয়েছিল। এ ধারাবাহিকতায় ওয়াশিংটন চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ এবং বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশের শুল্ক বিরতির যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা আরও তিন মাস অব্যাহত থাকবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই বিরতিতে বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা নিরসন এবং অন্যায্য বাণিজ্য আচরণ মোকাবিলার জন্য আরও সময় পাওয়া যাবে। ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, যা যে কোনো বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উইন-উইন সহযোগিতাই সঠিক পথ। দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা নীতিতে চললে কোনো সমাধান আসবে না।’
এর আগে ২১ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের এক দিনের মধ্যে চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। পরে পাল্টা ব্যবস্থায় ৪ ফেব্রুয়ারি কিছু মার্কিন কোম্পানির পণ্যে এবং মার্কিন কয়লা ও এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চীন। একইদিনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত তেল ও গাড়ি আমদানিতেও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটি। এসব শুল্ক ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। প্রতিরক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত পাঁচটি ধাতুর রপ্তানিও তারা এ সময় সীমিত করে।
এর বিপরীতে ৩ মার্চ সব চীনা আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ফেন্টানিল-সম্পর্কিত দ্বিগুণ ২০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয় ৪ মার্চ থেকে।
এদিনই চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি রপ্তানিতে পাল্টা ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক এবং ২৫টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ওপর রপ্তানি ও বিনিয়োগ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ সময় একটি চিকিৎসাযন্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি।
এরপরই ৮ এপ্রিল চীনা পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প, যা ৯ এপ্রিল কার্যকর হওয়ার পরই চীনও মার্কিন পণ্যে একই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করে। এভাবেই একে অপরের ওপর পারস্পরিক পণ্যে পাল্টা আক্রমণের কারণে এই শুল্ক তিন অঙ্কে পৌঁছায়। এতে দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
এ অবস্থায় ১০ থেকে ১২ মে জেনেভায় দুই দেশের মধ্যে উচ্চ ঝুঁকির বাণিজ্য আলোচনায় ৯০ দিনের জন্য শুল্কযুদ্ধ বিরতির চুক্তি হয়। এ সময় চীনের পণ্যে শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্কহার ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসে। ২ এপ্রিলের পর থেকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে আরোপিত অশুল্ক-বাধাও তুলে নেবে বলেও জানায়।