পাহাড়ে স্কুল চলে ‘বর্গা শিক্ষকে’, হাজিরা নিয়ে জালিয়াতি!

বিপ্লব রহমান
3 Min Read
প্রতীকী ছবি। স্কেচ: এআই/টাইমস
Highlights
  • ‘শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ার পাশাপাশি বেলা ১টার সময় স্কুল ছুটি দিয়ে দেন এমন অভিযোগ পেয়েছি। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে ‘ভাড়ায়’ অন্যদের দিয়ে পাঠদানের (স্থানীয়ভাবে এটি “বর্গা শিক্ষা”  নামে পরিচিত) গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বালুখালী ইউনিয়নের ‘বসন্ত মইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া হাজিরা’ দেখিয়ে বেতনভাতা তোলার অভিযোগও রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিন্ন ভাষাভাষী চাকমা জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত ওই পাহাড়ি জনপদের স্থানীয়রা এমন অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।  প্রাথমিক তদন্তে এ কমিটি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পল্লব রায়, সহকারী শিক্ষিকা ইনা চাকমা এবং জোনাকি ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ওইসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, অভিযুক্ত শিক্ষকরা বাস করেন জেলা সদরে। আর প্রায় ছয় দশকের পুরনো ‘বালুখালী ইউনিয়নের বসন্ত মইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি কাপ্তাই লেকের ওপারে কিছুটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানে ইঞ্জিন নৌকায় যাতায়াতই যোগাযোগের একমাত্র পন্থা। মোবাইল টেলিফোনের নেটওয়ার্কও ঠিকমত কাজ করে না।

এ অবস্থায় অভিযুক্ত ওই তিন শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার বদলে একজনকে ‘বর্গা শিক্ষক’ হিসেবে ভাড়া করেন। ‘ভাড়াটে শিক্ষক’ আবার আধাবেলা ক্লাস নিয়েই ছুটি দিয়ে দেন স্কুলটি। পাশাপাশি পাঠদান না করেই অভিযুক্ত শিক্ষকদের ‘ভুয়া হাজিরায়’ বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগও তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখছে।

পাহাড়ে স্কুল চলে বর্গা শিক্ষকে
রাঙামাটির বালুখালী ইউনিয়নের ‘বসন্ত মইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ফাইল ফটো, ফেসবুক পেজ

স্থানীয় ছয় নম্বর বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমর কুমার চাকমা টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, স্থানীয়দের ওইসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সদর উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সম্প্রতি সরেজমিনে বসন্ত মইন স্কুলের ঘটনা তদন্ত করেছেন। এছাড়া এর আগেও এলাকাবাসী ও অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাথে যৌথ সালিস সভা  হয়েছে। সালিসে শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আশা রাখি, তদন্তের পর ভবিষ্যতে স্কুলটিতে শিক্ষকরা  নিয়মিত ক্লাস নেবেন।’

পাহাড়ের বাস্তবতা তুলে ধরে  রাঙামাটির সাংবাদিক সুপ্রিয় চাকমা শুভ বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে   স্থানীয় শিক্ষকদের নিয়োগ না দেওয়ায় যাতায়াত সমস্যায় বার বার এসব অনিয়ম ঘটছে।’

‘তাছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় নাগরিক সুবিধা তেমন নেই বলে শিক্ষকরা সেখানে বাস করে পাঠদানে আগ্রহী হন না। বেশীরভাগ স্কুলে আবাসন সুবিধাও নেই।’ যোগ করেন তিনি।

এদিকে তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার মহাজন টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন প্রথমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও পরে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আসমা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ার পাশাপাশি বেলা ১টার সময় স্কুল ছুটি দিয়ে দেন এমন অভিযোগ পেয়েছি। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই রুটের শিক্ষকদের যাতায়তের সুবিধার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে ইঞ্জিন নৌকার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *