গত বছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর দেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে একটি মহল যখন প্রশ্ন তুলেছিল, সেই বিক্ষুব্ধ সময়েও সারাদেশে উদীচীকে নিয়ে তীব্র প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। দেশপ্রেম ও বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে আমৃত্যু অবিচল ছিলেন তিনি।
শুক্রবার উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রয়াত সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান স্মরণে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, ‘গত বছর অভ্যুত্থানের শুরুতে যখন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলো, তখন বদিউর রহমান তার প্রতিবাদ করেছেন। আবার ৫ আগস্টের পরে যখন জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক শুরু হলো, তখনও তিনি উদীচীকে নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি তার আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন এবং সংস্কৃতির বিকাশের জন্য জীবন সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
ছায়ানটের সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘সমাজ ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে এলো আর কে গেলো সেটা মূল বিষয় না, গুরুত্বপূর্ণ হলো সমাজের গভীরে কী হচ্ছে তা বোঝা। মানুষের ভেতর থেকে নেতিবাচকতা কমাতে হলে এবং সমাজে স্থিতিশীলতা চাইলে সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রণয় সাহা বলেন, ‘সত্যিকার বাঙালি সংস্কৃতিকে বিকশিত করতে চাইলে শিশু-কিশোর আন্দোলন দরকার। এটি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন বদিউর রহমান। তাই জীবনের প্রধমার্ধে তিনি এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অক্লান্ত শ্রম দিয়েছিলেন।’
চারু সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশ এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। এরকম সময়ে বদিউর রহমানের মতো আদর্শিক ও দেশপ্রেমিক মানুষ প্রয়োজন। কিন্তু ১৬ জুলাই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। এই সময়ে এই ক্ষতি অপূরণীয়।’
এসময় সরকারের বাজেটে সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ কম থাকার সমালোচনা করেন বক্তারা। তারা বলেন, ‘বাজেটে সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ এক শতাংশেরও কম থাকে সবসময়। এই খাতে খরচ বাড়ালে অপরাধ কমবে, পুলিশের পেছনে খরচ কমবে- এটা বোঝে না নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু এটার রিটার্ন অনেক ব্যাপক। সমাজ ধসে গেলে সেখান থেকে উত্তরণের জন্য সংস্কৃতির কাছেই আশ্রয় নিতে হয়।’
উদীচীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলা একাডেমির পরিচালক তপন বাগচী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মানবেন্দ্র দেব, যুব ইউনিয়ন সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিকী রানা, যুক্তরাষ্ট্র শাখা উদীচীর নেতা জাকির হোসেন বাচ্চু, অভিনেতা হাসান মাসুদ প্রমুখ।