
‘চূড়ান্ত পরিণতির সূচনা ১৪ জুলাই রাত থেকে। আমি তখন চানখারপুলে স্বপ্ন হাউসে থাকি। সেই রাতে ওই বাসার ছাদে আমি, নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম, আখতার হোসেন, আবু বাকের ও আবদুল কাদের আলোচনা করছিলাম। ‘এখন টিভি’ ওই ছাদে গিয়ে আমাকে টক শোতে যুক্ত করল। টক শোতে যুক্ত থাকা অবস্থায়ই শেষের দিকে শুনলাম, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে সবাই নাকি আন্দোলনে নেমে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসছে। মেয়েরা হলের গেট ভেঙে ফেলছে। আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কী যে হচ্ছে। সংশয়ে পড়ে গেলাম, এখন কী করব। গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের চাপ দিয়েছিল, আলটিমেটামের মধ্যে কিছু করা যাবে না। সমাধানের জন্য তারা সরকারকে সময় দেওয়ার কথা বলছিল,’ এভাবেই উত্তাল দিনগুলোর কথা স্মৃতিচারণায় বলছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক, বর্তমান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ শীর্ষক গ্রন্থে অভ্যুত্থানের দিনলিপি তুলে ধরেছেন সজিব ভূঁইয়া। গত মার্চে প্রথমা প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ‘চূড়ান্ত পরিণতির দিকে’ পর্বে তিনি তুলে ধরেন আন্দোলনের অকথিত অধ্যায়।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘খবর পেলাম, ছাত্রলীগ শাহবাগে জড়ো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম। দেখতে পেলাম, দু-একটা হলের শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হওয়ার পর বাকিগুলোর ফটক ছাত্রলীগ বন্ধ করে দিয়েছে। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, বিজয় একাত্তর হল ও শেখ মুজিব হলের ফটক বন্ধ করার খবর এল। শুনে আমি সেখানে গেলাম।’
‘বিজয় একাত্তর হলের ফটক বন্ধ করে হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীসহ ১৫-২০ জন পদধারী সামনে অবস্থান নিল। ততক্ষণে আশপাশের হল থেকে শিক্ষার্থীরা নেমে এসে বিজয় একাত্তর হলের ফটক খোলার চেষ্টা করতে শুরু করেছে। সেখানে একধরনের সমঝোতার জন্য আলাপ-আলোচনা চলছিল। আমি যেহেতু বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী, তাই রাত ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে বললাম, যারা আসতে চায়, আমরা শুধু তাদের নিয়ে যাব। কাউকে জোর করা হবে না। এর আগের দিনগুলোতে সন্ধ্যায় হলে গিয়ে স্লোগান দিতাম, হ্যান্ডমাইকে পরদিনের কর্মসূচির জন্য সবাইকে আহ্বান করতাম।’
ছাত্রলীগের নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বারান্দায় এসে স্লোগানে গলা মেলাত। জোর করে কাউকে নেওয়া হবে না বলার পর ছাত্রলীগের নেতারা ফটকটা একদিক থেকে সামান্য খুলে দিল। এরপর দেখা গেল সবাই আন্দোলনে চলে আসছে। এটা দেখে ছাত্রলীগ নেতারা ফটক আবার বন্ধ করে দিল। ফটক বন্ধ করার প্রতিবাদ করতে গেলে ছাত্রলীগের একজন আমাকে ঘুষি মেরে ফেলে দেয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার বক্তব্য এবং আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া রাজাকার ট্যাগিং নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিল। আমাকে ঘুষি মারার পর ছাত্রলীগের ওই নেতাকে শিক্ষার্থীরা জসীমউদ্দীন হলের মাঠে নিয়ে মারধর করে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে ফেলে দিয়ে কয়েকটা লাথিও দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী বের হয়ে এল। অনেকে বেরোতে পারল না। পরে নাহিদ ভাই এসে আমাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যান। ইতিমধ্যে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে গেছে।’

‘শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে ১৪ জুলাই রাতে যে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ হয়, সেটা একেবারেই পরিকল্পিত ছিল না। সেই রাতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে, আরেকটি অংশ টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়। আমরা টিএসসিতে গেলাম। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যারা ছিল, তাদেরও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে নিয়ে গেলাম। আমাদের একসঙ্গে থাকা দরকার। বিভিন্ন হল থেকে অসংখ্য ছাত্রী টিএসসিতে এসে জড়ো হয়েছিল। আমাদের একটা গ্রুপ লাঠিসোঁটা নিয়ে শাহবাগে গেল। সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। তবে কেউ আহত হয়নি। আমাদের সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে তারা সাহস পায়নি।’
‘১৪ জুলাই রাতের বিক্ষোভটা স্বতঃস্ফূর্ত হওয়ায় একেক জায়গায় একেক স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। কোনো হলের শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছে-“তুমি কে, আমি কে/ রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে। স্বৈরাচার স্বৈরাচার”। আবার অন্য হল থেকে ভিন্ন স্লোগানও উঠেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও অনেকে এসেছিল। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় একেক জায়গা থেকে একেক স্লোগান দেওয়া হয়। পূর্ববর্তী কর্মসূচিগুলোতে আগে থেকেই স্লোগান ঠিক করা থাকত। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্লোগান আহ্বান করা হতো। পরে সেগুলো ফেসবুকে পোস্ট করে দেওয়া হতো। ওই রাতে সেই সুযোগ ছিল না। টিএসসিতে আসার পর স্লোগান ধরলাম-“তুমি কে, আমি কে/রাজাকার রাজাকার”। শেখ হাসিনার আধিপত্যকে সরাসরি অস্বীকার করা হয়। শেখ হাসিনার কোনো কথার বিরোধিতা যে এভাবে করা যায়, সেটা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় কখনো কেউ ভাবতে পারেনি। ওই দিনই শেখ হাসিনার “মাজেজা” বিচূর্ণ হয়ে যায়। এটাই ছিল আমাদের ব্যাপারে ছাত্রলীগের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার মূল কারণ।’
‘যখন আমরা পরিকল্পিতভাবে “ব্লকেড” করেছি, তখন ছয়-সাত ঘণ্টাও “ব্লকেড” করা হয়েছে। কিন্তু ওই রাতে পরিকল্পনা ছিল না বলে সবাই অধৈর্য হয়ে যাচ্ছিল। রাত ১২টা-১টা বাজলে ছাত্রীরা চলে যেতে চাইল। সারা রাত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করার ব্যাপারে অনেকের মত ছিল, কিন্তু মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কর্মসূচি শেষ করে দিতে হয়। সবাই চলে যাওয়ার পর খবর পেলাম, রাত ১টার দিকে ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজের মেয়েরা ফটক ভেঙে বের হয়ে এসেছে। এর কাছাকাছি সময়ে বুয়েট থেকেও একটা বড় মিছিল এসে আমাদের না পেয়ে চলে গিয়েছিল।’
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা চলে আসার পর রাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাম্পাসে অবস্থান করে, খাওয়াদাওয়া করে এবং রাত ৩টার দিকে মহড়া দেয়। ওই রাতের ঘটনাযজ্ঞের পর টেনশন বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী এবং সাংস্কৃতিক বলয়ের লোকেরা পোস্ট দেওয়া শুরু করে যে শিক্ষার্থীরা রাজাকারের সন্তান, তাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত। ন্যায্য কথা বললেই স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার বা ‘পাকিস্তানে চলে যান’ বলার আওয়ামী প্রবণতা আরও একবার দেখা গেল। পরের দিন সকালে ওবায়দুল কাদের বলেন যে এই আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’

‘এরপর আমরা শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং এক দফার দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করি। শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে এই বিক্ষোভ ছিল আন্দোলনের এক দারুণ উত্তরণ। এ বিষয়ে সমন্বয়কদের ভেতরে অনেকের মধ্যে মতানৈক্য ছিল যে প্রধানমন্ত্রীর কথা বললে আন্দোলন ভিন্ন পথে চলে যেতে পারে। কিন্তু তখন অধিকাংশের মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি আমরা এক দফার সঙ্গে যুক্ত করি। শেখ হাসিনা ওই বক্তব্যটা না দিলেও ছাত্রলীগ খুব দ্রুতই আমাদের ওপর হামলা চালাত বলে আমার ধারণা।’
তিনি বলেন, ‘১৫ জুলাই দুপুর ১২টায় রাজু ভাস্কর্যে কর্মসূচি ছিল। এই দুঃখজনকভাবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল খুব কম। একট ৩টায় রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রলীগের কর্মসূচি ছিল। ছাত্রলীগ কা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছিল। ১৫ জুলাই সকালে আর্জেন্টিনার ম্যাচ থাকায় খেলা দেখে অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমরা মূলত বিকেল ৩টায় কর্মসূচি রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একই সময়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচির কারণে আমরা দুপুর ১২টায় কর্মসূচি ডাকি। কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর খবর পাই, সূর্য সেন হল ও বিজয় একাত্তর হল থেকে শিক্ষার্থীদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ছাত্রলীগ হলের মূল ফটকে তালা দিয়ে রেখেছে। আমরা তিন-চার শ জনের একটা দল সেখানে পাঠাই।’
‘তারা একটা মাইক নিয়ে সেখানে যায়। কিছুক্ষণ পরে খবর আসে, যারা মাইক নিয়ে গেছে, তারা বিজয় একাত্তর হলের ভেতরে আটকে পড়েছে। ছাত্রলীগ ওপর থেকে তাদের ইট-পাটকেল, পাথর ও ঢিল ছুড়ছে। আমরা টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা হই। কিন্তু বিকেল ৩টার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট এরই মধ্যে মধুর ক্যানটিনে জড়ো হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার জন্য হলগুলোতেও ছাত্রলীগের একটা করে গ্রুপ ছিল।’
‘টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হলে যাওয়ার ক্ষেত্রে সারজিসের ভিন্ন মত ছিল। সারজিস বলছিলেন, ‘ওখানে যাওয়া যাবে না।’ আমার ও রিফাতের সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরই মধ্যে ঢিল মেরে ছাত্রলীগ আমাদের কয়েকজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। রাজু ভাস্কর্যের সামনে দিয়েই তাদের রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনা সবাইকে উত্তেজিত করে তোলে।’
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস প্রতিরোধ সম্পর্কে আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হলের দিকে রওনা দিই। প্রতিটি হলের সামনে ছাত্রলীগের সদস্যরা লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা আইইআরের সামনের সড়ক দিয়ে মিছিল নিয়ে ঢুকলাম। তখন সূর্য সেন হলের ফটকে, মুহসীন হলের দিকের রাস্তার মাথায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা মিছিল থামিয়ে মেয়েদের রেখে এলাম।’
‘পরে সবাইকে লাঠি নিতে বলা হলো। হাতের কাছে লাঠি বা ইট-পাথর যে যা পেল সঙ্গে নিয়ে একটা বড় গ্রুপ মল চত্বরের ভেতর দিয়ে বিজয় একাত্তর হলের দিকে গেল। কারণ, এরই মধ্যে সেখানে মাথা ফেটে যাওয়ায় তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মিছিল নিয়ে তখন সামনের দিকে এগোনোর কথা ভাবা হচ্ছে। আমরা লাঠিসোঁটা হাতে ২০-২০ মিছিলটাকে পার করাতে চাইছিলাম। এ সময় সূর্য সেন হলের সামনে। ছাত্রলীগ আমাদের কটু-কাটব্য করছিল। সারজিস আলম আমাকে বললেন, “এখানে এসে আমি ঝামেলা বাড়িয়েছি।” আমি বললাম, “এটা তো হওয়ারই ছিল।” আমাদের মধ্যে একটু উচ্চবাচ্য হচ্ছিল। মিছিলে মাইকে ছিলেন নাহিদ ইসলাম। পরে বিজয় একাত্তর হল থেকে বাকের এসে যুক্ত হয়।’
‘বিজয় একাত্তর হলের সামনে সংঘর্ষ চলছে। সূর্য সেন হলের সামনে থেকে ১০-১২ জন আমাদের নিয়ে কটূক্তি করছিল। একপর্যায়ে আমাদের মিছিল থেকে তাদের ধাওয়া দিয়ে হলের ভেতরে নিয়ে কয়েকজনকে মারধর করা হয়।’
‘বাকিরা হলের ভেতরের ফটক বন্ধ করে লাঠি হাতে নিয়ে নানাভাবে আমাদের গালাগাল করতে থাকে। আমাদের ছেলেরা সেখানে কয়েকটা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে মুহসীন হলের দিক থেকে ধাওয়া দেওয়ার জন্য একটা গ্রুপ আসে। আমাদের আরেকটা গ্রুপ ধাওয়া দিয়ে তাদের ঢুকিয়ে দেয় মুহসীন হলের ভেতরে। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভেতর থেকে ফটকে তালা মেরে দেয়। তারপর আমরা মিছিল নিয়ে পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের মোড়ে যাই। এ সময় সূর্য সেন হলের ভেতর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ ঢিল ছুড়ছিল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বিজয় একাত্তর হলের সামনে থেকে সবাইকে নিয়ে যাওয়া। একপর্যায়ে মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এফবিএসের সামনে দিয়ে মিছিল টিএসসিতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অগ্রসর হই। ছাত্রলীগ তখন মধুর ক্যানটিনের দিক থেকে বেরিয়ে আসে। একই সময়ে মুহসীন হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও চলে আসে। সাহস পেয়ে সূর্য সেন হল থেকেও ছাত্রলীগের কর্মীরা বের হয়ে আসে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিজয় একাত্তর হলের সামনে যে সংঘর্ষ চলছিল, সেখানে ছাত্রলীগ হলপাড়ার অন্যান্য হল থেকে বেরিয়ে একজোট হয়ে যায়। শেখ মুজিব হলের পকেট গেট দিয়েও সেদিন ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী প্রবেশ করেছিল। আমাদের ছেলেদের হাতে ছিল ঢিল, আর ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে ছিল স্টাম্প, হেলমেট আর আগ্নেয়াস্ত্র। চার-পাঁচটি হলের ছাত্রলীগ হলপাড়া থেকে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিতে দিতে সূর্য সেন হলের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে চলে আসে। এফবিএসের সামনে আমরা তিন দিক থেকে ঘেরাও হয়ে যাই। এই পরিস্থিতিতে আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কেউ চলে যাচ্ছে, কেউ লড়াই করছে, কেউ মার খাচ্ছে-এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমরা কোনোভাবেই পিছু না হটতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করি। মাইক নিয়ে ভিসি চত্বরে গিয়ে সবাইকে আবার সংগঠিত করার চেষ্টা করি। কাউকে আমরা চলে যেতে নিষেধ করলাম। কিন্তু ভয় পেয়ে একটি অংশ চলে যায়’…যোগ করেন তিনি।