‘প্রেম অন্ধ হয়’, ভালোবাসার তীব্র অনুভূতির ব্যাখ্যা দিতে এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। ভালোবাসার গভীরতায় একে অন্যকে মোহিত করতে অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ডও করেন অনেকে। প্রেমিকার জন্য বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে ১০৮টি নীল পদ্ম নিয়ে আসেন প্রেমিক, আবার প্রেমিকের সঙ্গে জীবন কাটাতে সব মায়া-পরিবার-ঐশ্বর্য ত্যাগ করে এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়ার ঘটনাও আমরা অহরহই দেখি।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা হালের আলোচিত এআইয়ের প্রেমে ‘অন্ধ’ হয়ে স্ত্রীকে তালাক দিতে চাওয়ার মতো ঘটনা বোধহয় বিশ্বে এবারই প্রথম ঘটেছে।
চীনের জিয়াং নামের ৭৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি চ্যাটবটের প্রেমে পড়েছেন, আর তার এই প্রেম এতই গভীর যে স্ত্রীর কাছে তালাক চেয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম বেইজিং ডেইলি’র খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ‘ডিজিটাল অবতার’ দেখেন জিয়াং। এআই তৈরি ওই চ্যাটবট ভিডিও বার্তায় আবেগঘন প্রেমের বার্তা দিয়েছিল।
অবতারটির অস্বাভাবিক ভঙ্গিমা স্পষ্টতই রোবটের মতো আড়ষ্ট ছিল। কথার সঙ্গে ঠোঁটের নড়াচড়া (লিপ-সিঙ্ক) না মিললেও অবতারটির প্রতি মুগ্ধ হয়ে পড়েন জিয়াং। গভীর আগ্রহ নিয়ে তিনি প্রতিদিন ফোনের পাশে অপেক্ষা করতেন, কখন চ্যাটবটটি পরের প্রেমময় বার্তা পাঠাবে।
চ্যাটবটটি কেবল আবেগীয় বার্তাই দিত না, জিয়াংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতো। ধীরে ধীরে জিয়াং স্ত্রীকে ভুলে এআইয়ের প্রেমে মজে যান।
ফোনের প্রতি স্বামীর গভীর আসক্তি ভাবিয়ে তোলে জিয়াংয়ের স্ত্রীকে। অসন্তুষ্ট হয়ে স্বামীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান তিনি। সংসারে অশান্তি জিয়াংকে চ্যাটবটের দিকে আরও বেশি ঠেলে দিতে থাকে।
অবশেষে জিয়াং স্ত্রীকে জানান, তিনি তালাক চান; যেন পুরোপুরি এই রোবট প্রেমিকার প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন।
তবে জিয়াংয়ের প্রেমে বাধ সাধে তার সন্তানেরা। ডিজিটাল প্রজন্মের সন্তানেরা জিয়াংকে ওই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘ডিজিটাল অবতারের’ প্রকৃত রূপ বুঝিয়ে দেন।
জিয়াং তখন বুঝতে পারেন, তিনি আসলে প্রেম করছেন এক কাল্পনিক চরিত্রের সঙ্গে, যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই।
মানুষ-এআই প্রেমের এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা সতর্ক করে বলছেন, বয়স্ক ব্যক্তি যারা এআই নির্ভর প্রজন্মের উত্থান সম্পর্কে বিস্তর ধারণা রাখেন না, তাদের উপরই এআই সবচেয়ে বেশি মানসিক প্রভাব ও আবেগজনিত নির্ভরতা সৃষ্টি করতে পারে।
চীনের এক স্নায়ু বিশেষজ্ঞ বেইজিং ডেইলিকে বলেন, ‘জিয়াংয়ের জীবনে এটি হয়তো একটি বড় ভুল ছিল। কিন্তু তার প্রেম অনুভূতি ও আবেগ বাস্তবতার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এআই চরিত্রগুলি বাস্তবে নেই, তবুও তারা মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে।’