রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলদাদপুর সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়িতে সাম্প্রতিক হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন ফিরেছে নিজ নিজ বাড়িতে। প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তবে হামলার গুজবের কারণে এলাকাবাসীর মনে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা চান, আগের মতো হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি।
৩০ জুলাই আলদাদপুর স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় ধরনীকান্ত রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী কনিকা রানী, পুত্রবধূ বৃষ্টি রানী, মেয়ে ভারতী রানী ও নাতনিকে নিয়ে তিনি আবারও বসবাস শুরু করেছেন। তবে আগের ঘটনার স্মৃতি এখনও তাজা। তার তিনটি টিনের ঘর মেরামত করে দিয়েছে প্রশাসন। বৃষ্টি রানী বলেন, ‘আমরা ফিরে এসেছি ঠিকই, কিন্তু বারবার শুনি আবার হামলা হতে পারে, ভয় লাগে।’
আলদাদপুরের একাধিক বাসিন্দা, বিশেষ করে রঞ্জণ রায়ের পরিবার হামলার বড় শিকার। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে রঞ্জণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তার বাড়ি এবং আত্মীয়স্বজনদের বাড়িগুলোতে হামলা হয়। তার মা নিয়তি রানী বলেন, ‘ছেলেকে নিজেরাই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি, তবুও আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হলো। এর বিচার চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা শোভা রানী, বিন্দু রানী ও মনোরঞ্জন শীলসহ অনেকে জানান, তারা এমন ঘটনার মুখোমুখি আগে কখনো হননি। লোকনাথ বাবার মন্দিরের পুরোহিত বলরাম সাধু বলেন, ‘এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী হিন্দু-মুসলমান একসাথে বাস করে আসছে। হঠাৎ এমন ঘটনা ভাবনার বাইরে।’
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত আছে। ঘটনার পর রবীন্দ্র রায় ১,২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন, যার ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘উস্কানি দিয়ে কেউ পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।’
পুলিশ সুপার আবু সাঈম জানান, ‘যারা দোষী, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।’
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দ্রুত ও দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন।