যুক্তরাষ্ট্র বড় বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর শুল্ক কড়াকড়ি করায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এখন এক বিরল বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পোশাকে ৩০ শতাংশ এবং ভারতীয় রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করায়, দেশটির আমদানিকারকরা দ্রুত বিকল্প উৎসে অর্ডার সরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা।
এর ফলে বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধা, উৎপাদন সক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য আলাদাভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ক্রেতা প্রতিনিধিরা আবার যোগাযোগ শুরু করেছেন, আগে স্থগিত হওয়া অনেক অর্ডার ফিরে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিকারকরা ইতোমধ্যে এই পরিবর্তিত বাস্তবতার প্রভাব টের পাচ্ছেন।’
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীন ১৬৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব নিয়ে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক ছিল। এ সময় দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ, যার রপ্তানি ছিল ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বা ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বৃদ্ধির কারণে চীনের তৈরি পোশাক খাত মন্থর হয়ে যাচ্ছে। এ বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পোশাক আমদানি ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে আসার মাধ্যমে সেটি স্পষ্ট।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের শিপমেন্ট বাড়ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এ কারণে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘এটি শুধু শুল্কের বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক রপ্তানি সরবরাহ চেইনের পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৬ দশমিক ২০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে, যেখানে কম্বোডিয়া থেকে এ হার ৩৬ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং পাকিস্তান থেকে ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা এ খাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে।
অন্যদিকে, চীনের পোশাক রপ্তানি তার বহুমুখী বাণিজ্য কাঠামোর মাত্র ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ হলেও দেশটি এই খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘চীন তৈরি পোশাক খাত থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। আর ভারত ও ভিয়েতনাম এ খাতে নিজেদের বৈচিত্র্য আনছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বৈশ্বিক চাহিদার বড় অংশগ্রহণের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত। তবে এর জন্য প্রয়োজন লক্ষ্যভিত্তিক নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতি।’
শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কপ্রাপ্ত উৎস খুঁজে ফিরছে বৈশ্বিক ক্রেতারা। এই প্রেক্ষাপটে শিল্প নেতারা বলছেন, বাংলাদেশকে এখনই ভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হবে। শুধু অর্ডার ধরে রাখতে নয়, দীর্ঘমেয়াদে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখতে উদ্ভাবন ও বাজার বৈচিত্র্যের পথেও হাঁটতে হবে বাংলাদেশকে।