কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামে ধরলা নদীর তীরে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রায় ৩৫০ মিটার দীর্ঘ বাঁধটির ৩০ মিটার অংশে সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও অবহেলার কারণে বারবার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত থেকে একের পর এক সিসি ব্লক দেবে গেছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে সহস্রাধিক পরিবার ও কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি। বাঁধ রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে। তবে ডাম্পিং জোনে পর্যাপ্ত সিসি ব্লক ফেলা হয়নি। ফলে পানির প্রবল স্রোত বাঁধটিকে আঘাত করছে এবং ধসের ঝুঁকি বাড়ছে।
সারডোব গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই বাঁধ আমাদের রক্ষার কবচ। ২০২২ সালের বন্যার ক্ষতি আমরা এখনও সামলে উঠতে পারিনি। এবার যদি বাঁধ ভেঙে যায়, গ্রামটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’
কৃষক আব্দুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘বাঁধের কাজে অনিয়ম হয়েছে। প্রয়োজনীয় সিসি ব্লক না ফেলার কারণে বাঁধ এখন স্রোতের আঘাত সহ্য করতে পারছে না।’
কুড়িগ্রাম পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মুন্না হক বলেন, ‘আমরা আপাতত জিও ব্যাগ ফেলছি। পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, ধসে যাওয়া প্রকল্প এলাকায় রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান কাজ করেছেন, তবে এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সম্পূর্ণ দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
২০২০ সালে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ৬২৯ কোটি টাকার ‘ধরলা প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। এর আওতায় ২০ কিলোমিটার ২৯০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ, ১৭ কিলোমিটার ৯০০ মিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ এবং ১৪ কিলোমিটার ৮৮৯ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এরই মধ্যেই ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করছে পাউবো।
এই প্রকল্পের ফলে প্রায় ২২ হাজার ৪০০ পরিবার, ৫০টি হাটবাজার, ৩০টি নৌ-ঘাট ও ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়।