করোনা মোকাবেলায় নেই অর্থ, বিদেশ থেকে আনতে হবে টিকা-কিট

বিপ্লব রহমান
4 Min Read

দেশে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আলাদা অর্থ বরাদ্দ নেই। সারাদেশে রয়েছে টিকা ও ভাইরাস শনাক্তের কিটেরও তীব্র সংকট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন কোভিড-১৯ (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) মোকাবেলায় সরকারের কাছে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে টিকা ও কিট আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রাজধানীর মহাখালীতে কোভিড হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা । ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

রোববারই দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা) শেখ সাইদুল হক টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত টিকা ব্যবহারের পাশাপাশি ভাইরাস শনাক্তে যথেষ্ট কিট ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ কারণে জেলা পর্যায়ে কিটের চাহিদা ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে টিকা আমদানির উদ্যোগও নেওয়া হবে।’

তিনি জানান, স্থানীয় পর্যায়ে অল্প কিছু কিট কেনা হলেও দেশের বাজারেও এর স্বল্পতা রয়েছে। তাই বিদেশ থেকে কিট সংগ্রহ করা জরুরি।

রাজধানীর মহাখালীতে কোভিড হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা । ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

করোনা খাতে আলাদা অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নে অতিরিক্ত পরিচালক শেখ সাইদুল হক বলেন, ‘এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে, আলাদা অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন খাত থেকে অর্থ ছাড় করা হবে। চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে ১ জুলাই থেকে অর্থ ছাড় শুরু হবে। চাহিদাপত্রের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।’

‘বিদেশ থেকে টিকা ও কিট আমদানির জন্য আমাদের আরো কয়েকদফা উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়বে,’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) জানিয়েছে, করোনার আগের সংক্রমণের সময় সংগ্রহ করা টিকার মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এখন ৩১ লাখ ফাইজারের টিকা আছে। মোট

রাজধানীর মহাখালীতে কোভিড হাসপাতালে করোনা জোন । ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

জনসংখ্যার তু্লনায় এটি নিতান্তই কম। এরমধ্যে গত দুই মাসে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ ফাইজারের টিকা সব জেলায় পাঠানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৬ আগস্ট।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫১৫ জন। এর মধ্যে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ১৬। এ ছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩৩ জন শনাক্ত হয়েছেন।

প্রতিবেশি দেশ ভারতে কোভিড-১৯ (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) আশঙ্কাজনক মাত্রায় বাড়তে থাকায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি জনসমাগমে মাস্ক পরার বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এছাড়া ঢাকার হযরত শাজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আগতদের কোভিড শনাক্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেনাপোলসহ ভারতের সাথে সংযুক্ত সচল স্থল বন্দরেও বসানো হয়েছে একই রকম সুরক্ষামূলক সতর্কতা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনার সিকুয়েন্সিং তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে আগে থেকে বিদ্যমান ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি শনাক্ত হয়েছে।

আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশে যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, সেটিও কোভিড-১৯। তবে এটি ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট, ভাইরাসের কোনো নতুন ধরন নয়।’

তিনি বলেন, ‘দেশে এর সংক্রমণ বাড়ছে বলে আগাম সতর্কতা জরুরি। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া কিছু নেই।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *