এজেন্সিকে দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়াতে মৌচাকের হত্যাকাণ্ড!

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
রাজধানীর মৌচাকে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের পার্কিং-এ গাড়ির ভেতর দু'টি মরদেহ পাওয়া যায়। ছবি: টাইমস

বিদেশ যাওয়ার জন্য এজেন্সিকে দেয়া টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলের পার্কিংয়ে দু’জনকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন নিহতদের স্বজনরা। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতের স্বজনরা এ কথা জানান।

হাসপাতালের পার্কিংয়ে রাখা গাড়ি থেকে উদ্ধার নিহত জাকির হোসেন (২৬) ছিলেন ওই গাড়ির চালক এবং নিহত মিজান (৩৮) তার সহকারী। নোয়াখালীর চাটখিলে দক্ষিণ গোমাতলীর মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মিজানুর এবং লটপটিয়ার আবু তাহেরের ছেলে জাকির হোসেন।

এর মধ্যে জাকির খিলপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং মিজান দুই নম্বর রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন।

জাকিরের বাবা আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলের কারো সঙ্গে কোনো ঝগড়া নেই। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে মেরেছে তাও জানি না। তবে দুই বছর আগে আমেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। সেই দালাল তাদেরকে ঢাকায় পল্টনে ফজলু নামে ট্র্যাভেল এজেন্সির এক লোকের কাছে নিয়ে এসেছিল। এরপর জাকিরকে তারা শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে আমেরিকা পাঠানোর কথা থাকলেও তারা সেটা পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে ছেলেকে আমরাই দেশে ফিরিয়ে আনি।’

তিনি আরও জানান, তারপর থেকে ওই ফজলুরের কাছে টাকা ফেরত চাইলেই, সে নানান বাহানায় এড়িয়ে যেতে থাকে। টাকা চাওয়ার কারণেই একবার জাকিরকে মারধরও করা হয়েছিল। সবশেষ কিছুদিন আগে এলাকাতে দালালের সঙ্গে কথা হলে সে চলতি মাসের ১০ তারিখে টাকা ফেরত দেবে বলে স্ট্যাম্পে সই করে। কিন্তু ওই তারিখে তারাই জাকিরকে মেরে ফেলেছে বলে তার ধারণা।

নিহত জাকির হোসেন। ছবি: টাইমস

এদিকে, নিহত মিজানুরের ভাগিনা রিয়াদ জানান, তার মামা আগে গ্রামে বালু ব্যবসা করতেন। তবে সেই ব্যবসা বাদ দিয়ে আপাতত মাছের খামার করেছিলেন। তিনিও কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। জাকির আর মিজানুর বন্ধু হওয়ায় গাড়ি চালানোর সময় প্রায়ই তিনি মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি চালানো শিখাতেন। শনিবার রাতেই তারা দু’জন, গাড়ির মালিক ও তার আত্মীয় গ্রাম থেকে ঢাকায় যান। ওই রাতেই মালিকের আত্মীয়ের বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। পরদিন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে ভর্তি এক রোগীকে নিয়ে তাদের গোমাতলীতে ফেরার কথা।

নিহত মিজানুর। ছবি: টাইমস

ওই গাড়ির মালিক মাহমুদ সৌরভ জানান, তিন মাস ধরে জাকির হোসেন তার প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালান। তার আত্মীয় ইতালি যাবে বলে, রাতে গাড়িতে চার জন ঢাকায় আসেন। এরপর তাকে বিমানবন্দর নামিয়ে তিন জন সিরাজুল মেডিকেলে যান। সেখানে ভর্তি রোগীকে রোববার সকালে ছুটি দেওয়ার কথা। তাই সৌরভ ওই রাতেই বাসে গ্রামে ফিরে যান। এরপর রোববার বিকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত ফোনে বহুবার জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও, তাকে পাওয়া যায়নি। এদিন বেলা ৩টার দিকে রমনা থানা পুলিশ সিরাজুল মেডিকেলের পার্কিংয়ে তার গাড়ির ভেতর থেকে দুই জনের লাশ পাওয়া গেছে বলে জানায়।

এর আগে, রমনা থানার পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে জানান, তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও ফোসকা পড়া। এ ছাড়া নিহতদের মুখ লালচে ফোলা ও রক্তমাখা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদনে তাদের মৃত্যুর নির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ নেই।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *