শক্তিতে, শারীরিক গঠনে এগিয়ে থাকা মুরাস ইউনাইটেডের বিপক্ষে মাঠে নেমে প্রথমার্ধে শূন্যতে আটকেছিল ঢাকা আবাহনী। প্রতিপক্ষ সাজানো আক্রমণ নিয়ে খেলতে নামলেও ম্যাচের প্রথম দিকে তাদের একক আধিপত্যের পর ধীরে ধীরে খেলায় ফিরে আসে মারুফুল হকের দল। তবে শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা মুরাস দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের স্বভাবত খেলা খেলে ঢাকা আবাহনীকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয়।
বল দখলে এগিয়ে ছিল মুরাস ইউনাইটেড। নিজেদের ডিফেন্স থেকে বল বের করে আক্রমণ সাজাতে বারবার চেষ্টা করেছে তারা, আর সেই আক্রমণাত্মক প্রেসিংয়ের কারণে আবাহনীর খেলোয়াড়রা খুব বেশি সময় বলের দখল রাখতে পারেনি। শুরু থেকেই মুরাসের আক্রমণ একের পর এক ঢেউ তুলে আসে আবাহনীর ডিফেন্সের দিকে। কিন্তু আস্থার জায়গা হয়ে দাঁড়ান গোলরক্ষক মিতুল মারমা, যিনি প্রথমার্ধে কয়েকটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ ঠেকিয়ে দেন।
১৭ মিনিটে সুলেমান দিয়াবাতের শট বার ছুঁয়ে বাইরে চলে গেলে বেঁচে যায় আবাহনী। ২৩ মিনিটে হাসান মুরাদের থ্রু বল পেয়ে আল-আমিনের সামনে সুযোগ এলেও সেটি গোলমুখ দেখেনি। ৩১ মিনিটে দিয়াবাতের শট ডিফ্লেক্ট হয়ে ইব্রাহিমের পায়ে এলেও সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি। ৪০ মিনিটে বক্সের ভেতরে গিয়েও ভুল সিদ্ধান্তে আরেকটি সুযোগ হারান ইব্রাহিম। প্রতিপক্ষ ডিফেন্সে জায়গা খুঁজে পাওয়া কঠিন হওয়ায় ৪২ মিনিটে দূরপাল্লার শটে ভাগ্য পরীক্ষা করেন শেখ মোরসালিন।
৪-৩-৩ ফরমেশন দিয়ে শুরু করলেও ডিফেন্স সামলাতে গিয়ে কখনো ৫-৪-১, কখনো ৪-৪-২ রূপ নেয় আবাহনীর খেলা। এই কৌশল পরিবর্তন কিছুটা হলেও প্রতিপক্ষকে আটকাতে সহায়ক ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এসে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন আতায় ঝুমাশেভ। ৪৭ মিনিটে আন্দ্রি বাতসুলার নিখুঁত ক্রস থেকে হেডে বল জালে পাঠান তিনি। শারীরিক সক্ষমতায় স্পষ্ট ব্যবধান মুরাসের খেলোয়াড়রা ম্যাচ জুড়ে কাজে লাগাতে চেয়েছে। ৫১ মিনিটে মাকসাতের বাঁ পায়ের শট বার ঘেঁষে বাইরে গেলে স্বস্তি মেলে আবাহনী শিবিরে।
৫৮ মিনিটে কোচ মারুফুল হক পরিবর্তন আনেন, ইব্রাহিমের জায়গায় জাফর ইকবালকে নামিয়ে। আল-আমিন যদিও স্বাভাবিক পজিশনে ছিলেন না, ডান প্রান্তে খেলেও সুযোগ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন। কাজেম শাহ ও শেখ মোরসালিন পজিশন অদলবদল করে মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চালিয়েছেন।
৬৭ মিনিটে ডাবল পরিবর্তন, কাজেম শাহের জায়গায় মিরাজুল ও আল-আমিনের জায়গায় এনামুল ইসলাম। ৭২ মিনিটে দিয়াবাতের বাড়ানো বল থেকে জোন-১৪ এরিয়া থেকে বাম পায়ে শট নেন, তবে গোল মেলেনি। ৮৭ মিনিটে শাকিল হোসেনের স্থানে নামেন পাপন সিংহ। শাকিল দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনী তুলনামূলক আক্রমণাত্মক খেললেও প্রতিপক্ষের শারীরিক সুবিধা ও অভিজ্ঞতা তাদের বারবার পিছিয়ে দিয়েছে। মুরাসের শুরুর একাদশে ৯ জন ইউক্রেনের খেলোয়াড় ছিলেন, যাদের উচ্চতা ও গড়ন আবাহনীর খেলোয়াড়দের চেয়ে অনেক বড়। তবুও আবাহনী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়েছে সমানে সমান।
কিরগিজ প্রিমিয়ার লিগের সেরা দলের বিপক্ষে মাঠে নেমে এ ধরনের পারফর্ম্যান্স সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ঝুমাশেভ দ্বিতীয় গোল করে ম্যাচের ফলাফল নিশ্চিত করেন। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে জয় পায় মুরাস ইউনাইটেড, আর লড়েও শূন্য হাতে মাঠ ছাড়ে ঢাকা আবাহনী।