রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য’ চায় সরকার

সালেহ নোমান
3 Min Read
উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস পালন করা হয়েছে। ছবি: ফাইল ফটো
Highlights
  • ‘এই সরকারের মেয়াদ আর কয়েক মাস। এরপর রাজনীতিকদেরই বিষয়টি সামলাতে হবে। তাই আমরা চাই, তারা এখন থেকেই বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করুক’

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য চায় অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এই জটিল মানবিক ও নিরাপত্তা সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সরকারের প্রতিনিধিরা।  এ কারণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কক্সবাজারে রোববার শুরু হওয়া তিনদিনের আন্তর্জাতিক সংলাপে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের পাশপাশি ডাকা হয়েছে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদেরও।

সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা। সম্মেলনের প্রতিটি অধিবেশনে তারা রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের বক্তব্য এবং বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। এক সঙ্গে ভিন্ন দল ও মতের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সোমবার টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য।

‘এই সরকারের মেয়াদ আর কয়েক মাস। এরপর রাজনীতিকদেরই বিষয়টি সামলাতে হবে। তাই আমরা চাই, তারা এখন থেকেই বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনা করুক’, বলেন তিনি।

এর আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একাংশের প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনেও রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবকে দায়ী করেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

‘সরকার এমন ব্যর্থতার আর পুনরাবৃত্তি চায় না’, এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর এ সংকট আরও জটিল হচ্ছে। আর রাজনৈতিক বিভক্তি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন আরও কঠিন করে তুলছে। সেইসঙ্গে আমাদের আন্তর্জাতিক অবস্থানও আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।’

কক্সবাজারে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংলাপে কথা বলেন রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংলাপে কথা বলেন রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

এ সময় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এই সংকট এককভাবে সরকারের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম দরকার, যেখানে সব দল তাদের মতামত ও কৌশল উপস্থাপন করতে পারবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে চাই। আমরা দলীয়ভাবে এমন একটি অবস্থানে থাকতে চাই, যেখানে আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয় এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারও নিশ্চিত হয়।’

রাজনৈতিক ঐক্য গঠনে সরকারের আগ্রহকে এবি পার্টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করেন দলের মহাসচিব ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফুয়াদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর গভীরভাবে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন।’

সংলাপে অংশ নেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খানও। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। তাই রাজনৈতিক ঐকমত্যের মানে হওয়া উচিত প্রজন্মগত ঐকমত্য, যেখানে তরুণদের কণ্ঠস্বরও গুরুত্ব পাবে।’

দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের এই আন্তর্জাতিক সংলাপে আমন্ত্রণের বিষয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, এই সংকট সমাধানের পথ কেবল সরকারি কর্মকর্তা বা সহায়তা সংস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। রাজনৈতিক প্রতিনিধিরাও যেন তাদের মূল্যবান মতামত এবং পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে পারেন সরকার সে চেষ্টাই করছে।

‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে’ উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে না পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ প্রয়োগ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *