ভারতে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীকে বরখাস্তের বিল

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
হট্টগোল ও প্রতিবাদের মুখে বিলটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

টানা ৩০ দিন কারাবন্দী থাকলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের পদচ্যুত করার বিধান রেখে বিতর্কিত সংবিধান সংশোধনী বিল লোকসভায় পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার লোকসভায় এই ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যেসব অপরাধের শাস্তি পাঁচ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জেল, সেই ধরনের ‘গুরুতর অপরাধে’ অভিযুক্ত কোনো কেন্দ্রীয় বা রাজ্যস্তরের মন্ত্রী টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকলে তিনি আর মন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকতে পারবেন না। বরখাস্ত করার এখতিয়ার থাকবে রাষ্ট্রপতি বা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের হাতে।

বিরোধীদের প্রতিবাদ, বিতর্ক

বিলটি পেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা লোকসভায় প্রতিবাদ শুরু করেন। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে ও এআইএমআইএমসহ বিভিন্ন দলের সাংসদরা সভার ‘ওয়েল’-এ নেমে বিক্ষোভ জানান। অনেকেই বিলের কপি ছিঁড়ে সভাকক্ষে ছুড়ে ফেলেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল ভারতের সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।

কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি, কেসি বেণুগোপাল, এবং এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, এই বিল আসলে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার নতুন হাতিয়ার। কোনো মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই পদচ্যুত করার ব্যবস্থা ‘বিচারবিরোধী’ এবং ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে মন্তব্য করেন তারা।

প্রিয়াঙ্কা ও মমতার কড়া সমালোচনা

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেকোনো মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ এনে তাকে ৩০ দিন জামিন না দিয়ে জেলে আটকে রাখা হতে পারে। ৩১তম দিনেই তিনি বরখাস্ত হবেন। দোষ প্রমাণের আগেই শাস্তি কার্যকর হলে সেটা হবে মৌলিক অধিকার খর্ব করা।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিলটির বিরোধিতা করে বলেন, ‘এই সরকার হিটলারি কায়দায় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চাইছে।’

‘এক্স’ হ্যান্ডলে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। এটা জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়ংকর।’

কেজরিওয়াল প্রসঙ্গ সামনে আনলেন বিরোধীরা

বিরোধীদের অনেকেই এই বিলের সম্ভাব্য প্রভাব বোঝাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল–এর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। আবগারি নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে কেজরিওয়াল পাঁচ মাস জেলে ছিলেন, যদিও পদত্যাগ করেননি। নতুন বিল আইন হলে ৩০ দিন পরেই তাকে পদচ্যুত হতে হতো-এমনটাই বলছেন বিরোধীরা।

সরকারের ব্যাখ্যা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

বিলটি পেশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘এটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের পথে একটি কঠোর পদক্ষেপ।’ তবে হট্টগোল ও প্রতিবাদের মুখে তিনি নিজেই বিলটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। পরে তা সংসদের যৌথ কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদের উভয় কক্ষে দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় সরকারের সেই সমর্থন নেই, ফলে বিলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

ভারতের প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত চার্জশিট দাখিলের জন্য তদন্তকারী সংস্থার সর্বোচ্চ সময়সীমা ৯০ দিন।

কিন্তু প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, চার্জশিট না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র ৩০ দিনের হেফাজতের ভিত্তিতে একজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা যাবে- যা অনেকের মতে, আইনি ন্যায়বিচারের ধারণার পরিপন্থী।

সিপিএম নেতা এম এ বেবি মন্তব্য করেছেন, ‘এটা বিজেপির নতুন ফ্যাসিবাদ।’

রাজ্যসভার সিপিএম সদস্য জন ব্রিটাস বলেন, ‘এই বিল আসলে বিরোধী রাজ্য সরকারগুলিকে ভাঙার আরেকটি কৌশল।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *