পেসারদের দাপুটে সন্ধ্যা, পাকিস্তান ১১০ রানে অল আউট

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
মিরপুরে দারুণ এক সন্ধ্যা কাটল বাংলাদেশি পেসারদের। ছবি: বিসিবি

সরকারি ছুটির দিন নয়। সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে কর্মব্যস্ততা ফিরেছে রাজধানীতে। তবুও মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সব গ্যালারি দর্শকে পূর্ণ হতে শুরু করে বিকেল না গড়াতেই। দীর্ঘ ১৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছে হোম অব ক্রিকেটে, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। কদিন আগেই লিটন দাসরা দেশে ফিরেছেন শ্রীলংকাকে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে। ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন আর টানা ব্যর্থতার পর আচমকা পাওয়া সাফল্যের মিশেলে মিরপুরে ফুল হাউজ শো। দীর্ঘদিন পর চেনা দর্শকের সামনে খেলতে নেমে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে ১১০ রানে অল আউট করেছে বাংলাদেশ।

ব্যাটিং অর্ডারে ফখর জামান, সাইম আইয়ুব, মোহাম্মদ হারিসের মতো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টরা থাকলেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহে থেমেছে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান। তাসকিন আহমেদ, তানজিম সাকিবদের সাথে মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিং স্পেলের মুখে এক ফখর ছাড়া কেউই সেভাবে ব্যাট করতে পারেননি। সম্ভাবনা জেগেছিল দলীয় শতরান পেরোনোর আগেই অল আউট হওয়ার। অবশ্য শেষদিকে আব্বাস আফ্রিদির তিন ছক্কাতে সেই বাধাটা টপকে গেছে পাকিস্তান।

শনিবার ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক লিটন দাস বলেছিলেন, হাইস্কোরিং ম্যাচ না হলেও সিরিজটা জমবে। সম্ভাব্য স্পিন সহায়ক উইকেটের কথা মাথায় রেখে লিটনের অনুমানই ঠিক হলো। শুরুর সুইং আর মুভমেন্ট কাজে লাগিয়ে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই পাকিস্তানের নাভিঃশ্বাস তুলে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। ইনিংস শুরু করেন স্পিনার শেখ মাহেদী। প্রথম বল ডট, দ্বিতীয় বলে এগিয়ে এসে মিড অনে লফটেড শটে চার মারেন ফখর জামান। পরের বলেই অবশ্য মাহেদী প্রমাণ করেন, টি-টোয়েন্টিতে কেন তাকে নতুন বলে এত ভরসা করেন লিটন। যদিও শর্ট ফাইন লেগে সেই বলেই ফখরের ক্যাচ ছেড়ে দেন তাসকিন।

পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে অবশ্য ফখরের ক্যাচ ছাড়ার প্রায়শ্চিত্ত তাসকিন করেছেন আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুবকে ফিরিয়ে। তার ফুল লেংথ বলে ফ্লিক করে ডিপ ফাইন লেগে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ওপেনার। এক ওভার পরেই শ্রীলংকা সিরিজ জয়ের নায়ক মাহেদীর ঝলক, হারিসকে ফিরিয়ে।

নিজের প্রথম স্পেল করতে এসে দারুণ লাইন-লেংথে বল করে আগুন ঝরিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। হিট দ্য ডেক ধরনের বোলার হওয়াতে হার্ড লেংথে ফেলে বেশ সহজেই সিমে হিট করিয়েছেন বল। উইকেটে সোজা যাওয়া বলগুলোতে রীতিমতো হিমশিম খেতে খেতে আউট হয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা। তানজিমের সামনে অসহায়ই মনে হচ্ছিল তাকে। যদিও সেই অসহায়ত্ব ৯ বলের বেশি স্থায়ী হয়নি তার। রান বের করতে চেয়ে স্কুপ শটে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন এই ডানহাতি ব্যাটার।

পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে প্রথম বল হাতে নিয়েই সাফল্য পেয়েছেন মোস্তাফিজ। ক্রস সিমড ডেলিভারিতে শট খেলে থার্ডম্যানে তার বলে ক্যাচ দিয়েছেন, হাসান নওয়াজ। এরপর আরো একটা উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ, দারুণ এক স্লোয়ারে। ২৩ বলে ১৭ রান করা খুশদিল তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন রিশাদের হাতে। কেবল দুই উইকেটে পেলেও দারুণ, দুই স্পেল মিলে দারুণ কিপ্টে ছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। ৪ ওভার বল করে মাত্র ৬ রান দিয়েছেন, কাটার-স্লোয়ার-বাউন্সারে ডট আদায় করেছেন ১৮টি।

ইনিংসে রান আউট হয়েছে দুটি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি ওপেনার ফখরের। পাকিস্তানের রানের চাকা টেনে নেয়া এই বাঁহাতি স্কয়ার লেগে বল ঠেলে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু দ্রুত সিংগেল নিতে চেয়ে নওয়াজের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে নন স্ট্রাইকিং এন্ডে রান আউট হন লিটনের থ্রো থেকে। ৩৪ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৪৪ রান করেন তিনি।

শুরুতে সাইমের উইকেট পাওয়া তাসকিন পরে নিয়েছেন আরো দুই উইকেট। ইনিংস ও নিজের শেষ ওভারে প্রথম বলে নেন ফাহিম আশরাফের উইকেট। পরের বলে লিটনের দারুণ রিফ্লেক্সে করা রান আউটে কাটা পড়েন সালমান মির্জা। তৃতীয় বলে আব্বাস আফ্রিদি ফেরেন লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ৩.৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন তাসকিন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *