‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র ৯০ বছর: কালজয়ী উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন

আহমেদ জামান শিমুল
3 Min Read
'পুতুল নাচের ইতিকথা' ছবির দৃশ্যে জয়া আহসান ও আবীর চ্যাটার্জী। ছবি: কোলাজ

‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ উপন্যাসের  ৯০ বছর পূর্তিতে শুক্রবার কলকতায় মুক্তি পেল এর উপর নির্মিত সিনেমা। একই নামের ছবিটির পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়। চিত্রনায়ক আবির চ্যাটার্জীর বিপরীতে আছেন এপারের জয়া আহসান।

২০ শতকের অজ পাড়া গাঁয়ের সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতি, সমাজ সংস্কার, প্রেমসহ সংসারের নানা টানাপোড়েন নিয়ে গড়ায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ কাহিনী। প্রধান চরিত্রে গ্রাম্যবধূ ‘কুসুমের’ রহস্যময় ভূমিকা ফুটিয়ে তুলেছেন জয়া আহসান। আর সদ্য পাস করা গ্রাম্য ডাক্তার শশীর আকর্ষণও কুসুম।

আজও এই কাহিনী কেন প্রাসঙ্গিক, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘১৫ বছর আগে এ ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল। আর ছবিটি এখনও সমসাময়িক।’

কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনায় তিনি আরো বলেন, ‘এ ছবিতে আমি হয়তো জয়া ও আবিরকে নিয়েছি। কিন্তু উপন্যাসটি পড়ে হয়তো কারো মনে শশী ও কুসুম চরিত্রে অন্য কাউকে ঠিকঠাক লাগতেও পারে।’

‘কারণ প্রতিটা পাঠকই তার কল্পনায় কাউকে না কাউকে ভেবে রেখেছেন। একটি দৃশ্য হয়তো লেখক লিখেছেন একটি বা দুটি পাতা জুড়ে। সেটিকে পরিচালক হিসেবে আমি আমার কল্পনার মিশ্রণ ঘটিয়ে পর্দায় এনেছি’, যোগ করেন পরিচালক।

চিত্রনাট্যে বেশ কিছু বিষয় বাদ দেওয়া হলেও মূলে হাত দেওয়া হয়নি– জানান তিনি।

এর এক মিনিটের ট্রেলারে ‘শরীর শরীর শরীর, তোমার মন নেই কুসুম’ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। পরিচালক জানান, উপন্যাসে এ সংলাপটি কে বলেছেন, তা স্পষ্ট না হলেও কিন্তু চিত্রনাট্যে সেটি স্পষ্ট।

এ সংলাপ নিয়ে ‘কুসুম’ চরিত্রের জয়া আহসান বলেন,  ‘বরাবর নারীকেই কামনা-বাসনার বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কুসুমের নিজেরও কামনা-বাসনা রয়েছে, যা সে লুকোয় না।’

‘কুসুম একটা খোলা বইয়ের মতো। তার মন, শরীর ও আত্মা– সব এক রকম। এখানেই শশীর সঙ্গে তার পার্থক্য। কুসুম কিন্তু শশীর চরিত্রকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। সে এতটাই খোলা মনের, সতেজ একটি চরিত্র’, উল্লেখ করেন জয়া।

জয়া আরো বলেন, ‘কুসুমের মধ্যে কোনও জড়তা নেই। আমাদের সকলের মধ্যে একটা লক্ষ্মণরেখা থাকে। এটা তার মধ্যে নেই বলেই সে এত আধুনিক। আমি নিজেও কুসুমের মতো হতে পারব না!’

‘এই গ্রামবাংলার বাউলদের কথাও তাই, দেহ-মন-আত্মা সব মিলেমিশে একাকার। “যাহা আছে দেহ ভাণ্ডে, তাহাই রয় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে।’’

অন্যদিকে, শশীর চরিত্রে অনেকগুলো দিক- একদিকে যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানে বিশ্বাসী, নাস্তিক। অন্য দিকে রয়েছে দ্বিধা ও সিদ্ধান্তহীনতা। তাই এই চরিত্র নিয়ে চিন্তায় ছিলেন আবির, এর প্রস্তাব পেয়ে পড়েছিলেন দ্বিধায়।

‘বাঙালিদের মধ্যে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। এই একই বৈশিষ্ট্য রয়েছে শশীর মধ্যেও’, বলেন আবির।

জয়া-আবির এর আগে জুটি বেঁধেছিলেন  ‘বিসর্জন’ সিনেমায় । কৌশিক গাঙ্গুলির  ‘বিসর্জন’-এর মতো এ ছবিতেও জয়াকে দেখা যাবে তাঁতের লাল পেড়ে ডুরে শাড়ি, কপালজোড়া ধেবড়ে যাওয়া সিঁদুরের টিপের আটপৌরে বাঙালি নারী চরিত্রে।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *