ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এখনই আলোচনার টেবিলে বসতে চান না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধের আভাস পাওয়া গেলেও অচিরেই সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয় প্রেসিডেন্ট পুতিনের কার্যালয়।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্টের সহযোগী ইউরি উশাকভ স্পষ্ট ভাষায় জানান, ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপে ‘সম্ভাব্য’ ওই বৈঠকে ‘উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার’ কথা হয়েছে। তবে সেখানে পুতিন ও জেলেনস্কি ‘অবশ্যই’ উপস্থিত থাকবেন- এমন কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
এর আগে ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন ঐতিহাসিক বৈঠক হয়। সেদিন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কোনো ধরনের শান্তি চুক্তি ছাড়াই সেই বৈঠকের ইতি টানেন দুই নেতা। তবে বৈঠকটিকে ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনার ‘দুয়ার’ খুলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প।

এরপর ১৮ আগস্ট হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কিসহ ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হন জেলেনস্কি। তবে তিনি শর্ত জুড়ে দেন বৈঠকটি হতে হবে ত্রিপাক্ষিক। যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও উপস্থিত থাকতে হবে।
সম্ভাব্য ওই বৈঠকের জন্য পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। জানান, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধের ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছেন। সোমবার ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একটি বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু করেছি… প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে।’ কিন্তু পরদিন সকালে ফক্স নিউজে তিনি বলেন, ‘আমি তো কেবল প্রস্তাব দিয়েছি… চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো তাদেরই নিতে হবে। আমরা তো সাত হাজার মাইল দূরের দেশ।’

মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় মস্কোও জানায়, ওই বৈঠকের সম্ভাবনা এখনো অনেক দূরে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নমনীয় সুরে বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের আলোচনাই প্রত্যাখ্যান করছি না – হোক সেটা দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক। শীর্ষ পর্যায়ের যেকোনো বৈঠক খুবই সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়।’
ক্রেমলিনের ভাষায় এর অর্থ, রাশিয়া এখনই এমন কোনো বৈঠকের জন্য প্রস্তুত নয়। তবে ভবিষ্যতে বৈঠকের বিষয়টি ভেবে দেখা হতে পারে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, মস্কোর এমন দ্বিচারিতা অবাক করার মতো কিছু নয়। তাদের দাবি, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শুরু করেছিলেন পুতিন নিজেই। ইউক্রেনের দনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ স্বীকৃতি দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বরাবরই দাবি করে এসেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
চ্যাথাম হাউজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক ওরিসিয়া লুতসেভিচ বলেন, ‘যেখানে পুতিন ইউক্রেনের মানচিত্রকে সমর্থন করেন না সেখানে ওই দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসা তার জন্য একটি বড় পরাজয়ের স্বীকারোক্তি হবে। এ বৈঠক হলে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে জেলেনস্কিকে পুতিনের বৈধভাবে স্বীকার করে নিতে হবে।’
‘এ ছাড়া, রুশ জনগণকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করাও হবে কঠিন। কারণ, পুতিন দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচার করে আসছেন, জেলেনস্কি একজন নাৎসি, ইউক্রেন একটি পশ্চিমা দাসত্বে থাকা “পাপেট স্টেট” এবং তিনি অবৈধভাবে ইউক্রেনের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন’, যোগ করেন তিনি।