নাটকের বিশাল বাজেটেও আয় নেই কেন?

আহমেদ জামান শিমুল
4 Min Read
বিটিভির ধারাবাহিক নাটক ‘মৃত্তিকার যাত্রা’র একটি দৃশ্য। ছবি: ভিডিও ক্লিপ থেকে নেওয়া

নাটকের বাজেট নেই—পুরনো এ সমস্যা মিটেছে আগেই। এখন অহরহই হচ্ছে ১০ লাখ টাকার বেশি বাজেটের নাটক। জাকারিয়া শৌখিনের ‘পথ হলো দেরী’র বাজেট নাকি ৩০ লাখের উপরে, এমন গুঞ্জনও আছে।

কিন্তু এত বিপুল বাজেটে নাটক বানিয়েও তেমন লাভ করতে পারছেন না–দাবি নাট্যপ্রযোজকদের। অসংখ্য নাটকের ভিউ কোটির উপরে, তাহলেও কেন লাভ নেই নাটকে?

নির্মাতা ও প্রযোজক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ‘সিনেমাওলা’ থেকে প্রতি বছরই অনেক নাটক নির্মাণ করেন। শীর্ষ এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আয় এখন অনেক কমে গেছে বলে জানার তিনি। টাইমস অব বাংলাদেশকে রাজ বলেন, ‘নানা কারণে নাটক থেকে আয় কমে গেছে। বিশেষ করে ফেসবুক থেকে রেভিনিউ কমে গেছে। ফেসবুকের নানারকম নিয়মনীতির কারণে এ সমস্যা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নাটকগুলোর মূল আয় ছিল ফেসবুক ও ইউটিউবভিত্তিক। এছাড়া আমরা টেলিভিশন রাইটস, স্পন্সর থেকেও আয় করতাম। সে আয়ও অনেক কমে গেছে। সব মিলিয়ে লাভের অংক অনেকটাই গেছে কমে।’

বিটিভির নাটক ‘রোদে যাব’র একটি দৃশ্য। ছবি: ভিডিও ক্লিপ থেকে নেওয়া

আরেকটি বড় মাপের নাট্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান– সিএমভি মিউজিক। এর প্রাণপুরুষ এসকে শাহেদ আলী পাপ্পু জানান, আগে একটি নাটক ইউটিউবে ১ কোটি ভিউ হলে ৪ হাজার ডলার আয় সম্ভব ছিল। অথচ এখন সে জায়গায় হচ্ছে লাভ নেমে এসেছে  দুই হাজার ৮০০ ডলারে। দঅর্থাৎ ফেসবুকের পাশাপাশি ইউটিউবের আয়ও কমে গেছে। এ অংক প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার পট পরিবর্তনের পর আগে যারা স্পন্সর করতেন, তাদের অনেকেই এখন স্পন্সর করছেন না। আবার অনেকে সেভাবে সাড়াও দিচ্ছেন না। এছাড়া টিভি রাইটস ও স্পন্সর আয়– সবই এখন হয়ে গেছে ঈদ ও বিভিন্ন উৎসব ভিত্তিক।’

‘আগে একটা ভালো নাটকের টিভি রাইটস হিসেবে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পেতাম। অথচ এখন টিভি রাইটসের আয় হিসেবেই ধরা হয় না,’ হতাশা ছড়ায় তার কণ্ঠে।

নাট্য শিল্পীদের মধ্যে অপূর্ব, মোশাররফ করিম, আফরান নিশোদের পারিশ্রমিক একেকটি নাটকের জন্য চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

অন্য জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে মেহজাবীন, ফারহান, তৌসিফ, জোভান, নিলয়ের বাজার দর প্রতি নাটকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা।

নির্মাতারা বলছেন, নাটকের বাজেট বাড়লেও খরচের ৭০ ভাগই চলে যাচ্ছে তারকাদের বাড়তি পারিশ্রমিক মেটাতে। ফলে দিনশেষে খুব একটা লাভ হাতে থাকছে না।

বিটিভির ঈদের বিশেষ নাটক ‘মি. অসহায়’র একটি দৃশ্য। ছবি: ভিডিও ক্লিপ থেকে নেওয়া

নির্মাতা ও প্রযোজক জিয়াউদ্দিন আলম বাস্তবতা তুলে ধরে টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিল্পীরা পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন তাদের চাহিদা বাড়ায়। কিন্তু কোনও কারণে যদি বাজেট ফেল করে বা ঠিক সময়ে শুটিং শেষ না করা যায়, তাহলে বাড়তি বাজেট প্রযোজক দিতে চায় না। অনেক সময় পরিচালকের পারিশ্রমিক থেকে তা সমন্বয় করতে হয়।’

তবে শিল্পীদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি অন্যভাবে দেখছেন এসকে শাহেদ আলী পাপ্পু ও মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। পাপ্পু বলেন, ‘আমাদেরকে এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এখন আমরা বাজেট কমালে নাটকের মানও কমে যাবে। আর শিল্পীরা দিন হিসেবে নয়, প্রতি নাটক হিসেবে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। এ অবস্থায় বাজেট বাড়ার কারণে আগে যদি কোনো শিল্পী তিনদিন সময় দিতেন, এখন তিনি হয়তো দিচ্ছেন পাঁচ-ছয়দিন সময়। এতে শ্যুটিং ইউনিটের ব্যয় বাড়ছে।’

রাজ বাজেটের বিষয়টিকে পরিচালক-প্রযোজকের ইচ্ছাধীন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমি চাইলে একটা ১০ টাকা বাজেটের কাজ ২৫ টাকায় করতে পারি। আমি হয়তো চাইবো আমার কাজটার মান আরও বাড়ুক। এখন আয় কমেছে, এ কারণে অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে। আয়ের ভিন্ন পথ খুঁজতে হবে। এর সঙ্গে বাজেট বা শিল্পীদের পারিশ্রমিকের কোনো সম্পর্ক রয়েছে বলে আমি মনে করি না।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *