ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে ঢাকার আদাবরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাবা, পটুয়াখালীতে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার সময় ধর্ষণের শিকার তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে। মর্মান্তিক এ ঘটনা হতবাক ও ক্ষুদ্ধ করে তোলে সকলকে। আর শনিবার (২৬ এপ্রিল) স্বজনদের শোকে স্তব্ধ করে সেই মেয়েটি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।
স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ৯টার দিকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মেয়েটি। পরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া মেয়েটির মৃত্যৃ সংবাদ নিশ্চিত করে বলেন, ‘মেয়েটি শেখেরটেকের বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে রাত ১২টার দিকে আমাদের তার মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে।’
গতবছর ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আদাবরে গুলিবিদ্ধ হন মেয়েটির বাবা। ১০ দিন পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পটুয়াখালীর দুমকিতে তাকে সমাহিত করা হয়। আর সেখানেই গত মার্চ মাসে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার সময় ধর্ষণের শিকার হন মেয়েটি।
দলবেঁধে ধর্ষণের এ ঘটনায় ২০ মার্চ দুজনকে আসামি করে মামলা করেন মেয়েটি। আসামি স্থানীয় জনতা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শাকিব মুন্সি (১৯) এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সিফাত (১৭)।
পুলিশঅভিযুক্ত শাকিব ও সিফাতকে আইনের আওতায় নেয়।
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, বাবার কবর জিয়ারত করার পর নানা বাড়ি যাওয়ার সময় দুমকি থানা এলাকায় আসামিরা মেয়েটির পিছু নেয়। তাকে মুখ চেপে ধরে রাস্তার পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে আসামিরা। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে মেয়েটির ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় আসামিরা।
আলোচিত ওই ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করে দেশব্যাপী আন্দোলন হয়। মামলার প্রধান আসামি শাকিব মুন্সি সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন, এমন সংবাদ জেনে মেয়েটি হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছেন স্বজনরা।
শনিবার রাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মরদেহ গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ এক স্বজন বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সবশেষে সাকিব জামিন পেয়েছে এমন সংবাদে মর্মাহত হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা ধারণা করছি।’