গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচ সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় নেতানিয়াহুর কাছে জবাব চাইল বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
গাজা সিটি পূর্ণ দখলে নিতে সোমবার নগরীর আল নাসের হাসপাতালে দুই দফায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে পাঁচ সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, নিহতদের মধ্যে আছেন রয়টার্সের সংবাদিক হুসাম আল-মাসরি, আল-জাজিরার সংবাদিক মোহাম্মদ সালামা, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মরিয়ম আবু দাগা, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক আহমেদ আবু আজিজ ও ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মোয়াজ আবু তাহা।
হাসপাতালে হামলা ও সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সাআর এবং সরকারি প্রেস অফিসের পরিচালক নিটজান চেনের কাছে যৌথভাবে চিঠি পাঠিয়েছে রয়টার্সের এডিটর-ইন-চিফ আলেজান্দ্র গ্যালোনি এবং এপি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জুলি পেস।
নেতানিয়াহুর বরাবর পাঠানো চিঠি:
ইসরায়েল সরকারকে দেওয়া রয়টার্স ও এপি’র যৌথ চিঠি অনেকটা এ রকম:
‘আমরা ২৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে পরিচালিত বিমান হামলার একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই, যে হামলায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের জন্য কাজ করা কয়েকজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।’
‘তাদের মধ্যে ফ্রিল্যান্স চিত্রসাংবাদিক মারিয়াম দাগ্গা এবং মুয়াজ আবু তাহা যথাক্রমে এপি ও রয়টার্সের জন্য কাজ করতেন। নিহত ক্যামেরাম্যান হুসাম আল-মাসরি রয়টার্সের কন্ট্রাক্টর ছিলেন। এ হামলায় আহত হয়েছেন ফটোগ্রাফার ও রয়টার্সের কন্ট্রাক্টর হাতেম খালেদ।’
‘প্রায় দুই বছর ধরে গাজার ভেতরে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ভয়াবহ যুদ্ধের সময় এই সাংবাদিকরা চরম ঝুঁকি নিয়ে সত্য ঘটনাগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরছিলেন।’
‘স্বাধীন সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এই হামলার শিকার হওয়ায় আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।’
‘গাজার নাসের হাসপাতাল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত এলাকা। সেখানে প্রাণঘাতী হামলা মেনে নেওয়া যায় না।’

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘ইসরায়েল সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে না।’
কিন্তু আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই, আইডিএফ-এর তদন্ত সাধারণত পরিষ্কার জবাব বা কার্যকর পদক্ষেপে গিয়ে পৌঁছায় না।
এমন অবস্থায় আমরা গভীরভাবে প্রশ্ন তুলছি—ইচ্ছাকৃতভাবে ‘লাইভ ফিডকে’ লক্ষ্য করে কি সাংবাদিকদের তথ্য পরিবেশনে বাধা দেওয়া হচ্ছে?
আমরা আশা করি এই তদন্ত দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হবে। নিহতদের পরিবার ও সহকর্মীদের প্রতি এই দায়বদ্ধতা অত্যন্ত জরুরি।

আইডিএফ-এর আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সাংবাদিক ও বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা তাদের কর্তব্য। একটি হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা এবং এর কিছুক্ষণ পরই যখন সাংবাদিক ও উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছেছেন, তখন আরেকটি হামলা—আমাদের প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করছে, আইডিএফ এই বাধ্যবাধকতা কতটা মেনে চলছে?
সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১৯৭ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮৯ জনই ফিলিস্তিনি।
আমরা আবারও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, স্বাধীন সাংবাদিকদের গাজায় নিরাপদ ও বাধাহীনভাবে প্রবেশ ও বের হওয়ার সুযোগ দেওয়ার পাশপাশি তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রক্ষা করা উচিত।
আমরা এ বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরও আলোচনা করতে প্রস্তুত এবং আবারও জোর দিয়ে বলছি—এই হামলার একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং জবাবদিহিতা অত্যন্ত জরুরি।