আসন্ন নির্বাচন প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: বিএনপির ফেসবুক
Highlights
  • ‘বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। আমার মাও তার এক সন্তানকে (আরাফাত রহমান কোকো) হারিয়েছেন আপনাদেরই মতো।’

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন,  ‘একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন হওয়া দরকার, তেমন দেশ গড়তে আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবার জন‍্য নিরাপদ, গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ‘এ দেশে যাতে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ ও চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। সেজন্য বিশেষ করে নারী সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীরা ভূমিকা রেখেছেন। নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কোনও রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু দেশের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার ক্ষেত্রে নারীরা অনেকাংশে পিছিয়ে।’

তাদের অর্থনৈতিক সাবলম্বীতায় বিএনপির বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। নারীদের শিক্ষাদান এবং অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে পারিবারিক সহিংসতা রোধ করা সম্ভব, যোগ করেন তিনি।

এ সময় বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রথম পর্যায়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ প্রান্তিক পরিবারের ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন সংগ্রামে নারীদের স্বজন হারানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমার মাও এক সন্তানকে হারিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। আমার মাও তার এক সন্তানকে (আরাফাত রহমান কোকো) হারিয়েছেন আপনাদেরই মতো।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় মারা যান। জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার আরাফাত ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে দমন-পীড়নের প্রসঙ্গে টেনে তারেক রহমান বলেন, ‘বহু স্ত্রী তার প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়েছেন, বোন তার ভাইকে হারিয়েছেন, অনেক মা বহুভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন। অনেক পরিবারের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজও শহীদ আর স্বজন হারানোর অসংখ্য মা বোনের শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ অবসানের পর আমাদের সবার সামনে শিশু-নারী-পুরুষ-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ সামনে এসেছে।’

‘এই যে যেই সুযোগটি এসেছে আমাদের সামনে, একে কাজে লাগিয়ে শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গঠনের জন্য, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী দিন নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ যোগ করেন তিনি।

২০২৪ ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। অনুষ্ঠানে একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং পরে ‘শহীদ’ পরিবারের সদস্যদের সন্মাননা মেডেল দেয় আয়োজক কমিটি।

তারেক রহমান, ‘বাংলাদেশে পরিবার হিসেবে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে থেকে আমরা যেটা পরিকল্পনা করছি, সামনের দিনগুলোতে বাস্তবায়নের সুযোগ এলে, প্রথম পর্যায়ে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ প্রান্তিক পর্যায়ে যে পরিবার আছে তাদের জন্য আমরা ফ্যামিলি কার্ড চালু করব।’

নারীদের উন্নয়নে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধান খালেদা জিয়ার নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের অর্ধেক সংখ্যক নারীকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূল ধারার বাইরে রেখে কখনোই আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন করতে পারব না, নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়।’

নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কখনোই কোনো রাষ্ট্রেই শুধু বাংলাদেশ নয় কোনো রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারে না এবং সে কারণে নারী শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্ধেক সংখ্যক নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে বিএনপি দিনের সকল কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে বা গ্রহণ করছে, যোগ করেন তিনি।

বিশ্বায়নের এই সময়ে নারীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘শুধু নারী পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা-দীক্ষায় কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি, যদি আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

আলোচনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খান রিতা। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

এ আলোচনা সভায় আরও রক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাজমেরী এস এ ইসলাম, তাহসিনা রুশদীর লুনা, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক শামীমা সুলতানা, শহীদ পরিবারের মধ্যে সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক হাসিনা আখতার।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *