বাংলাদেশের ইনিংসের ৩৫-তম ওভারে খেলা চলছিল তখন। সপ্তম উইকেট পতনের পর উইকেটে এসেছেন টেইলএন্ডার তানজিম হাসান সাকিব। দুশমন্ত চামিরা করলেন একটা তুমুল গতির বাউন্সার, আম্পায়ার দিলেন ওয়াইডের সংকেত। তখনই ক্যামেরা ধরা হলো পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। দুই শ্রীলংকান দর্শক খেলা দেখা ভুলে বসে বসেই ঘুমাচ্ছেন। কারণ তারাও জানতেন বাংলাদেশি ব্যাটারদের অসহায় আত্মসমর্পণের পর শ্রীলংকার সিরিজ জয় কেবল আর কিছু সময়ের অপেক্ষা ছিল। হলোও তাই। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলংকার দেয়া ২৮৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ অল আউট হয়েছে ১৮৬ রানে। ৯৯ রানে হারের এই ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভারও।
৬২ বল হাতে রেখে পাওয়া এই জয়ে ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল শ্রীলংকা। ঘরের মাঠে কুশাল মেন্ডিস-চারিথ আসালাঙ্কারা জিতলেন টানা অষ্টম ওয়ানডে সিরিজ। অথচ এই ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়ার সুযোগ ছিল মেহেদী হাসান মিরাজদের সামনে। পাহাড়ঘেরা কান্ডিতে এই ম্যাচ জিতলে শ্রীলংকার মাটিতে বাংলাদেশ পেত প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ। অথচ ইতিহাস বদলাতে চাওয়ার এই ম্যাচে লড়াইয়ের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না বাংলাদেশি ব্যাটারদের এপ্রোচে।
রান তাড়ায় নেমে পাওয়ারপ্লেতে দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও পারভেজ হোসেন লংকান পেসার জুটি আসিথা ফার্নান্দো-দুশমন্ত চামিরার বলে যেভাবে ভুগেছেন, তাতে তাদের আনপ্লেয়েবল মনে হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। পেস-সুইং-সিম মুভমেন্টের সাথে মানিয়ে খেলতেই পারছিলেন না। বিশেষত পায়ের ওপর আসা সোজা ডেলিভারিগুলোতে। আসিথার তেমনই এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন তানজিদ। ৩ চারে ১৩ বলে ১৭ রান করেন এই বাঁহাতি ওপেনার। চোট থেকে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্ত কোনো রান না করেই বোল্ড হয়েছেন চামিরার দারুণ এক বলে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ইমন-হৃদয় তুলেছেন ৪২ রান। যেখানে রান তোলার চেয়ে উইকেটে টিকে থাকাই মুখ্য ছিল তাদের কাছে। সেটার মাশুলও অবশ্য দিতে হয়েছে তাদের। ডট বলের চাপে পড়ে এক সময় মারতে যান ইমন। দুনিথ ভেল্লালাগেকে স্লগ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে নিশান মাদুশকার হাতে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ইমন আউট হওয়ার সাথেসাথে হৃদয়ের হাত তুলে প্রশ্নবাচক চাউনিতেই স্পষ্ট হয়েছিল ইমনের তখন শট খেলা একেবারেই যৌক্তিক ছিল না।
পরের জুটিতে উঠেছে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৩ রান। অধিনায়ক মিরাজের ব্যাট থেকে একটা বড় ইনিংস পাওয়া শুরু থেকেই। চারটি চার ও এক ছক্কায় ২৮ রানের ইনিংসে সেদিকেই এগোচ্ছিলেন, কিন্তু বাধ সাধলেন সেই ভেল্লালাগে। ২১তম ওভারের শেষ বলের ফ্লাইটেই ধরা পড়লেন মিরাজ, উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চাইলেন লফটেড শট, লং অফে ছুটে এসে ক্যাচ ধরে তাকে থামালেন জানিথ লিয়ানাগে।
১০৫ রানে ৪ উইকেট পড়ার পরই ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ হারায় বাংলাদেশ। শামীম পাটোয়ারী হাসারাঙ্গাকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চাইলে হন স্টাম্পিং। অন্য প্রান্তে ধীরগতির ব্যাটিংয়ে তাওহিদ হৃদয় সিরিজে ছুঁলেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। তবে তার ৭৫ বলে করা ফিফটির এপ্রোচ নিয়ে কথা বলা যায় চাইলেই। অষ্টম ফিফটি ছুঁতে এই ডানহাতি ব্যাটার ডটই দিয়েছেন ৪৩টি! ফিফটিকেও আর টেনে নিতে পারলেন কই! ব্যক্তিগত ৫১ রানে চামিরার দুর্দান্ত এক ইনসুইংগারে ব্যালেন্স হারিয়ে বোল্ড হন হৃদয়। বাংলাদেশের শেষ চার উইকেট চামিরার সাথে ভাগাভাগি করেছেন আসিথা ও হাসারাঙ্গা। তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন আসিথা ও চামিরা। বাকি চারটির দুই করে গেছে হাসারাঙ্গা ও ভেল্লালাগের পকেটে।
এর আগে টসে হেরে আগে ফিল্ডিং করতে নেমে বাংলাদেশের বোলাররাও ইনিংসজুড়ে সুবিধা করতে পারেননি। ১০০ রানের মধ্যে শ্রীলংকার প্রথম তিন ব্যাটারকে ফেরলেও সেই চাপটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি তাসকিন-মোস্তাফিজরা। অথচ ১৩ রানে প্রথমে ওপেনার মাদুশকা, এরপর দলীয় ৬৯ রানে ফিরেছেন নিসাঙ্কা। কামিন্দুও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন কুশাল মেন্ডিস ও অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। দুজনের ১২৪ রানের বড় জুটিতে ম্যাচ ক্রমেই বাংলাদেশের বাইরে নিয়ে যায় শ্রীলংকা। ১২৪ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন কুশাল। ফিফটি করে সিরিজ জয়ের ট্রফি তুলে ধরেছেন আসালাঙ্কা।
এক ম্যাচ পর একাদশে ফেরা তাসকিন ৫১ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। আগের ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেয়া বাঁহাতি স্পিনার আজ খরুচে। ৬১ রান দিয়ে পেয়েছেন নিসাঙ্কার উইকেট।