অচল চলন্ত সিঁড়িতে চক্ষুশূল

আরেফিন তানজীব
3 Min Read
রাজধানীর ফার্মগেটের ফুটওভারব্রিজের অচল চলন্ত সিঁড়িগুলো নোংরা-আবর্জনায় পথচারীদের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। ছবি: টাইমস
Highlights
  • বানানী ও এয়ারপোর্ট রোডের ফুটওভারব্রিজেও চলন্ত সিঁড়ি বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে গেছে।

রাজধানীর ব্যস্ত ফার্মগেট এলাকার ফুটওভারব্রিজের দুটি চলন্ত সিঁড়ি প্রায় তিন বছর ধরে বিকল। পথচারীদের সড়ক পারাপার সহজ করার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে এসব সিঁড়ি বসানো হলেও রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে তা এখন দৃষ্টিপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া হকারদের উৎপাত ও নোংরা-আবর্জনার বিড়ম্বনা তো আছেই।

নিয়মিত এই ব্রিজ ব্যবহারকারী পথচারীরা চলন্ত সিঁড়ির অচলাবস্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। কবে এসব চলন্ত সিঁড়ি আবার সচল হবে, সংশ্লিষ্ট কেউই তা নির্দিষ্ট করে বলতেও পারছেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবতা বর্জিত এমন উচ্চাভিলাষী প্রকল্প কোনো মতেই জনকল্যাণমূলক নয়। (সিজান পয়েন্ট সংলগ্ন) ২০৬ ফুট দীর্ঘ এই ব্রিজটি এখন রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ের দৃশ্যমান উদাহরণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য পুরনো ফুটওভারব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়। পরে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় করে ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় করে ১৪ কোটি টাকা।

পথচারীদের অভিযোগ, চলন্ত সিঁড়ির আশপাশের এলাকার শপিং মল ও হকারদের ব্যবহার্য ছেঁড়া কাগজ, পলিব্যাগসহ অন্যান্য বর্জ্যে প্রায়ই নোংরা হয়ে থাকে। এর মধ্যে দিয়েই সকলকে চলাচল করতে হয়।

নিয়মিত পথচারী সোহেল রানা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই ব্রিজটা তুলনামূলক উঁচু। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের জন্য এটি বড় সমস্যা।’

রাজধানীর ফার্মগেটের ফুটওভারব্রিজের অচল চলন্ত সিঁড়িগুলো নোংরা-আবর্জনায় পথচারীদের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। ছবি: টাইমস

‘সিঁড়িটি সচল থাকলে বয়স্ক ও নারীদের জন্য সহজ হতো, কিন্তু সবই এখন দুরাশা,’ যোগ করেন সোহেল।

আরেক পথচারী কিশওয়ারা সুলতানা বলেন, ‘চলন্ত সিঁড়ি সচল করা এখন সময়ের দাবি।’

আবুল কালাম নামে আরেক পথচারী বলেন, ‘এত সুন্দর ব্রিজ নষ্ট হয়ে থাকবে কেন? কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।’

রোকেয়া সরণির এক নারী যাত্রী বলেন, ‘চলন্ত সিঁড়ি যদি কাজই না করে, তাহলে এসব সিঁড়ি বসানোর মানে কী? সৌন্দর্য বাড়ানোর বদলে এগুলো জঞ্জালে পরিণত হয়েছে।’

ওভারব্রিজের নিচে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ জানান, সিঁড়ি অকেজো থাকায়, খাড়া সিঁড়ি পার না হয়ে অনেকে এখন সরাসরি রাস্তা পার হন। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

এ বিষয়ে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক এবং এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক এম শামসুল হক টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, বানানী ও এয়ারপোর্ট রোডের ফুটওভারব্রিজেও চলন্ত সিঁড়ি বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘এখানে যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। উন্নয়নের নামে কেবল টাকার অপচয় ছাড়া এসব কিছুই নয়।’

তিনি জানান, চলন্ত সিঁড়ির জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দরকার, না হলে ধুলো-ময়লায় সেগুলো দ্রুত নষ্ট হয়।

ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ ইজাজ সাংবাদিকদের জানান, ব্রিজ ও সিঁড়ির নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুইজন আনসার নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই চলন্ত সিঁড়িগুলো চালু করা হবে।’

এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে ‘হ্যাপি ডেভেলপমেন্ট’ এর একটি উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘নিজ দেশের বাস্তবতা ও পরিস্থিতি না বোঝার ফলেই চলন্ত সিঁড়িগুলো এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। এতে খরচ বাড়লে, জনগণের কোনো সেবাতে তা কাজে লাগে না।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *