যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক কমান্ড কেন্দ্রের কাছে ভারতীয় হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপে বাধ্য করে

3 Min Read
পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে হয়। গ্রাফিক্স: এআই/টাইমস

কাশ্মীরে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা শুরুতে সীমিত থাকলেও, তা দ্রুত চরম সামরিক সংঘাতে পরিণত হয় । এর মধ্যে ছিল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ড্রোন আক্রমণ। এই সংঘাত দক্ষিণ এশিয়াকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখেও ঠেলে দিতে পারত।

প্রথমদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সংঘাতে ‘আমেরিকার কোন ভূমিকা নেই’ বলে মন্তব্য করে নির্লিপ্ত অবস্থান নেন। ট্রাম্প বলেন, “ওরা বহু বছর ধরেই লড়াই করছে।”

তবে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়।

১০ মে নাগাদ নিয়ন্ত্রণ রেখার দু’পাশে একাধিক পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমান হামলা চলে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছিল ইসলামাবাদের কাছে নুর খান বিমানঘাঁটিতে হামলা। এর পাশেই পাকিস্তানের পারমাণবিক কমান্ডের কেন্দ্র স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন অবস্থিত বলে জানায় মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র।

যদিও সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত, তবু এই হামলা  পাকিস্তানের “লাল রেখা” ছুঁয়ে ফেলেছিল বলে বিবেচনা করে ওয়াশিংটন। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পাকিস্তান পারমাণবিক প্রতিশোধ বিবেচনা করতে পারে।

পাকিস্তানের জাতীয় কমান্ড কর্তৃপক্ষ (এনসিএ) বৈঠকে বসেছে এমন খবরে (যদিও পরে তা অস্বীকার করা হয়), এবং পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে পরোক্ষ হুমকি, ওয়াশিংটনের কাছে স্পষ্ট করে যে সংঘাত একটি বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক নীতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্ট রেখেছে। বিপরীতে, ভারত “নো ফার্স্ট ইউজ” নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সে অবস্থানে রাজনীতিক মোচড় দেখা যাচ্ছে।

যুদ্ধের আশঙ্কায় মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ভ্যান্স ও মার্কো রুবিও দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সংলাপ শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়, পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।

এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি হয়। ভারত ও পাকিস্তান আলাদাভাবে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এর পেছনে আমেরিকার চাপ ছিল স্পষ্ট।

এটাই প্রথম নয়—১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধেও প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হস্তক্ষেপ করে পারমাণবিক উত্তেজনা প্রশমিত করেন। এবারও সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল।

এ ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কতটা নাজুক এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সঙ্কট ব্যবস্থাপনায় কতটা ঘাটতি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই হস্তক্ষেপ স্মরণ করিয়ে দেয়—চীন, রাশিয়া ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উপস্থিতিতেও, পরমাণু সংঘাত এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনো সজাগ থাকতে হবে।

২০২৫ সালের যুদ্ধবিরতি হয়তো এখনকার জন্য টিকবে।

তবে যতদিন না ভারত ও পাকিস্তান একটি বিশ্বাসযোগ্য, দ্বিপাক্ষিক সংকট নিরসনের কাঠামো গড়ে তুলতে পারবে এবং স্পষ্ট পরমাণু নীতিমালা মেনে চলবে, ততদিন পারমাণবিক সংঘাতের ছায়া এই উপমহাদেশের ওপর ঝুলতে থাকবে।

বিশ্ব আবারও এক বিপর্যয়ের কাছ থেকে ফিরে এল। কিন্তু সেটা আঞ্চলিক সংযম নয়, বরং বাইরের আতঙ্কপ্রসূত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *