বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তনের পেছনে যথাযথ কারণ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থী। রোববার (১৩ এপ্রিল) চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসা এই আয়োজনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে তাদের মতামত না নিয়েই। তারা স্পষ্ট করে জানান, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত নন।
‘২০১৬ সালে ইউনেস্কো যেটিকে ‘অপরিমেয় বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই আয়োজনে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দেওয়া অনভিপ্রেত,’ উল্লেখ করেন তারা।
প্রিন্টমেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহারা নাজিফা বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই। বর্ষবরণের উৎসব সর্বজনীন হোক, আমরা চাই। তবে ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাদ দেওয়ার যৌক্তিক কারণ আমরা জানতে চাই।’
শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, বিগত সরকার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র রাজনৈতিক ব্যবহার করেছে ঠিকই, তবে তা পরিবর্তনের অজুহাত হতে পারে না। তারা বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে এই শোভাযাত্রা হয়ে আসছে এবং এটিতে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ অনুচিত।
এর আগে ১১ এপ্রিল চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ ঘোষণা দেন, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার নাম হবে ‘বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা’।
এই ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তকে মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ‘অশনি সংকেত’ বলে মন্তব্য করেছে এবং পূর্বের নাম বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, বর্ষবরণের শোভাযাত্রার জন্য তৈরি দুটি মোটিফে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে চারুকলা প্রাঙ্গণে ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ নামে একটি মোটিফে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরেকটি প্রতিকৃতি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাস্ক পরা এক যুবক আগুন ধরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা এসব ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ও মতপ্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কাজনক ইঙ্গিত বলেও মন্তব্য করেছেন।