আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আলোচনা সভা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের আদিবাসীদের সার্বিক মানবাধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন দেশের মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের সংগঠকরা।

রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘আইপিনিউজবিডি’র উদ্যোগে ‘আদিবাসীদের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় একথা উঠে এসেছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আইপিনিউজ বিডির সম্পাদক আন্তনী রেমা এবং সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করলে রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি হবে না। তাদের স্বীকৃতি দিলে দেশ ভাঙবে না। গণমাধ্যম এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রের ১৪ অনুচ্ছেদে আলোকে আদিবাসীদের নিজস্ব অধিকারের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি ইউজিন নকরেক মনে করিয়ে দেন, গণমাধ্যমের কারণে মধুপুর আন্দোলনে সাফল্য এসেছিল। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে আদিবাসীদের দুর্দশা তেমন প্রকাশ পায় না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপন বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশে সম্পাদকীয় নীতি, মালিকানা ও রাষ্ট্রীয় চাপের কারণে অনেক খবর প্রকাশ পায় না। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা ঢাকা পড়ে যায়।’

গণমাধ্যমের অপতথ্যের কারণে আদিবাসীদের নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। তার মতে, মানবাধিকার কর্মী ও সিভিল সোসাইটিকে যুক্ত করলে গণমাধ্যম বাধ্য হবে সঠিক তথ্য প্রচারে।

আইপিনিউজের যুগ্ম সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা জানান, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা আন্দোলনে অবদান রাখলেও আদিবাসীরা অবহেলিত। তিনি বলেন, ‘২৭ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়িত হয়নি। সমতল ও পাহাড়ে ভূমি বেদখল, হামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে।’

টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের আশা জাগলেও মূলধারার গণমাধ্যমে আদিবাসীদের খবর গুরুত্ব পাচ্ছে না। তার মতে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সহসাধারণ সম্পাদক হেলেনা তালাং বলেন, ‘যেখানেই বন, সেখানেই আদিবাসী। গণমাধ্যম যদি তাদের কথা না বলে, তারা হারিয়ে যাবে।’

পাহাড়ে চলাফেরায় আদিবাসীদের স্বাধীনতা নেই, সমতলেও জমি হারিয়ে তারা প্রান্তিকতায় ঠেলে পড়েছে, অভিযোগ করেন উন্নয়ন সংস্থা অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী।

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি ফিলিমন বাস্কে গাইবান্ধায় তিন ফসলি জমি দখলের চেষ্টার নিন্দা জানিয়ে তা প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের শিক্ষা ও ক্রীড়া সম্পাদক উজ্জল আজিম বলেন, ‘পাহাড়-সমতল উভয় অঞ্চলের আদিবাসীদের বড় সমস্যা ভূমি।’ তিনি সমতলের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সহসাধারণ সম্পাদক হেলেনা তালাং প্রমুখ।

আলোচনা শেষে আইপিনিউজ বিডির সম্পাদক আন্তনী রেমা আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের পাশে চান।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *