জুলাই ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আহত শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। সাক্ষী তার বক্তব্যে বলেন, আন্দোলনকালে পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
জবানবন্দিতে ইমরান জানান, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় বাঁ পায়ে পুলিশের গুলি লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার একপর্যায়ে শেখ হাসিনা হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে তার সঙ্গে কথা বলেন। এর একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ।’
ইমরান বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি তখন ওই কথার মানে কী। পরে দেখি আমার অস্ত্রোপচার স্থগিত হয়ে গেছে, ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না, বাবাও আমাকে নিয়ে যেতে পারছেন না। তখন বুঝি, আমাকে চিকিৎসা না দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে।’
তিনি জানান, শেখ হাসিনা প্রথমে তাকে ‘আপা’ বলে সম্বোধন করতে বলেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করে বুঝতে পারেন যে তিনি আন্দোলনকারী। এরপর হাসপাতাল ছাড়ার সময় হেল্পডেস্কে গিয়ে ওই নির্দেশ দেন।
ইমরান এই ঘটনার জন্য তিনজনকে—শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন—দায়ী করেন।
এই মামলার প্রথম সাক্ষী মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ রোববার আদালতে সাক্ষ্য দেন। একই দিনে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। বিচারকাজের সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণ বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত সহিংসতা, গণহত্যা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়। এ ঘটনার এক বছর পর এই বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে পলাতক। আইন অনুসারে তাদের আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ এবং অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হবে আগামী সপ্তাহে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সাক্ষীদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে।