কূটনৈতিক সম্পর্কের গতিপথ যখন পরিবর্তন হচ্ছে এবং ঢাকা-ওয়াশিংটনের শুল্ক আলোচনাগুলো অচলাবস্থায় ঠিক তখনই এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের কৌশলগত সংলাপের পর এমনটিই আশা করা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তুলা চাষিরা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় তারা এক নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরির আশা ব্যক্ত করেন।
আমেরিবাংলা করপোরেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য আমলাতন্ত্র ও লাভের পেছনে ছোটা মধ্যস্বত্বভোগীদের এড়িয়ে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের থেকে বাংলাদেশের টেক্সটাইল মিলগুলোতে তুলা সরবরাহের সুযোগ তৈরি করা। এ অনুষ্ঠানের স্পষ্ট বার্তা: ‘উৎপাদকরা কথা বলুক উৎপাদকদের সঙ্গে।’
এ সময় আমেরিবাংলার প্রধান নির্বাহী আসওয়ার রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে মার্কিন তুলা প্রতি পাউন্ডে আফ্রিকান বা ভারতীয় তুলার তুলনায় ৫ থেকে ৬ সেন্ট বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু যদি আমরা মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিই, অর্ডার প্রক্রিয়াকে সহজ করি এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউজ অনুমোদন দিই, তাহলে ভালো মানের তুলা আরও কম দামে দিতে পারব।’
বাংলাদেশি-আমেরিকান উদ্যোক্তা ও এই প্রস্তাবিত জোটের রূপকার আরও বলেন, ‘সস্তা তুলার উৎসগুলো যেখানে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বর্জ্য দেয়, সেখানে মার্কিন তুলায় সেই হার ২ শতাংশের নিচে এবং এটি ট্রেসযোগ্য, যা এখনকার সময়ের ওয়েস্টার্ন ক্রেতাদের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণে একটি বড় সুবিধা।’
যুক্তরাষ্ট্রের তুলা চাষিরা আবারও বৈশ্বিক বাজারে তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে চায়। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের তুলা আমদানিতে তাদের অংশীদারিত্ব কমে মাত্র ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ—বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক—তাদের জন্য এক নতুন লাইফলাইন, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যদি বাংলাদেশ তার তুলার অর্ধেকেরও বেশি সরাসরি মার্কিন কৃষকদের কাছ থেকে আমদানি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তবে সেই কৃষকরা বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে কংগ্রেসে কথা বলবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশি পোশাকে শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি তখন আলোচনার টেবিলে আসতে পারে।’
শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসই যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক নির্ধারণ করে। আর ট্রাম্প প্রশাসন যদি মার্কিন বাজারে প্রবেশের জন্য নতুন শর্ত জুড়ে দেয়—যেমন, আমদানি পোশাকের তুলা অবশ্যই আমেরিকান হতে হবে—তাহলে এই সরাসরি বাণিজ্য মডেল কেবল লাভজনক নয়, বরং আবশ্যিক হয়ে উঠতে পারে।
এই নীতিগত পরিবর্তন আঁচ করে আমেরিবাংলা একটি বিদেশি শোরুম চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে শুধু মার্কিন তুলা দিয়ে তৈরি পণ্য প্রদর্শন করা হবে। তাদের আশা, শিগগিরই মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা ‘ঘরোয়া ফাইবার’কে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য উৎসাহিত হবেন।
এ সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন হামিম গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, সাঈদ গ্রুপ, ডিভাইন গ্রুপ, ট্রু গ্রুপ, আরপিএম গ্রুপসহ শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এই আগস্টে কংগ্রেসম্যানরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন। তখনই তারা সবচেয়ে মনোযোগ দিয়ে তাদের ভোটারদের কথা শোনেন। আমাদের এখনই কাজ শুরু করতে হবে।’
বাণিজ্য পুনর্গঠন ও শুল্ক হুমকির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের তুলা চাষি ও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পপতিরা যেন একটি যৌথ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন। এখানে কেবল মুনাফা নয়, বরং রাজনীতি ও ভবিষ্যতের ওপর একে অপরের নির্ভরতায় এক নতুন সম্পর্কের সূচনা ঘটতে চলেছে।