দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ এই তিনটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তরিক সামাজিক দায়বদ্ধতার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে হলে সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈতিক দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করতে হবে।’
শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন (আইএসবিএস) ২০২৫–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যবোধের কথা বললেও তা কাজে লাগাতে পারি না এটাই মূল সমস্যা। নৈতিকতার অনুশীলন ছাড়া টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয়। আধুনিক পুঁজিবাদ শুধু প্রকৃতিকে নয়, সমাজ ব্যবস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এখনই যদি আমরা অর্থনৈতিক মডেল বদলাতে না পারি, তবে আগামী দিনে সভ্যতা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে।’
ভোগবাদী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রয়োজন আর লোভের পার্থক্য করতে শিখতে হবে। চাহিদার পেছনে নয়, মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোই এখন সময়ের দাবি। আমাদের যুদ্ধ নয়, সহমর্মিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
ইসলামের ন্যায়বিচার ও সমতার দর্শনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ইসলাম শুধু ধর্মীয় নির্দেশনাই দেয় না, এটি সামাজিক দায়িত্ববোধেরও শিক্ষা দেয়। মুনাফার নামে মানুষের দূর্দশার বোঝা বাড়ানো নয়, বরং আয়ের একটি অংশ অন্যের কল্যাণে ব্যয় করাকে ইসলাম উৎসাহিত করে।’
ফিলিস্তিন কিংবা রোহিঙ্গা সংকটে মুসলিম বিশ্ব এখনো একসঙ্গে দাঁড়াতে পারেনি বলেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
ইসলামী অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যাকাত ব্যবস্থাকে কার্যকর সামাজিক সমাধান হিসেবে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আধুনিক রাজস্ব ব্যবস্থায় আমরা কর দিই, কিন্তু সেই করের অর্থ প্রান্তিক মানুষের জন্য কতটা কাজে লাগে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যাকাত একটি লক্ষ্যভিত্তিক পদ্ধতি, যা দরিদ্র মানুষের সহায়তায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।’
এ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. হালিস ইউনুস এরসোজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইউএনআইডব্লিউ-এর মহাসচিব ইউপ আকমাল, সওয়াবের চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামান, আইআইআইটি বাংলাদেশের প্রতিনিধি এম আবদুল আজিজ ও কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।