ব্রিটিশ রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন প্রেমের কারণে। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন আঁড়ি পাতার জন্য। ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেটে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদর দপ্তরে আঁড়ি পেতেছিলেন নিক্সন। সেটাই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি।
সিংহাসন বা চেয়ার যেটাই বলি না কেন, এই যে ছেড়ে যাওয়া; এটা আসলে বোকাদের কাণ্ড। রাজা হয়ে চার্লস পূর্বপুরুষ এডওয়ার্ডের বোকামি প্রমাণ করেছেন। আর নিক্সনের বোকামি প্রতিনিয়ত নানা দেশের আয়রনলেডি এবং আয়রনম্যানরা প্রমাণ করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে ত আঁড়ি পাতার জন্য এক দপ্তরই খুলে ফেলা হয়েছিল।
সেই দপ্তর থেকে এখন ভাইবার বা অন্য কোনো মাধ্যমের ফোনকল ফাঁসের খবর পাওয়া যায় না। তবে ফেসবুকে প্রায় প্রতিনিয়তই ভেসে বেড়ায় ফাঁস হওয়া ফোন কল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাই এখন আর জনসভা নয়, চলে “জরুরি রেকর্ডিং” আর “ফাঁস-সংলাপ” এর জরুরি খেলা। “মেসেঞ্জার রাজনীতি”ও নতুন কিছু নয়।
একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নতুন যাত্রা, নতুন ভিশন, নতুন ওয়াদা; সবকিছুই ছিল সম্ভাবনার দ্যুতি নিয়ে। কিন্তু রাজনীতির খাতা উল্টাতে না উল্টাতেই হঠাৎ দেখা গেল, একজন বলছেন, ‘প্রস্তাব দিয়েছিল’। অন্যজন বলছেন, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’। আর গোয়েন্দা দপ্তর ব্যস্ত চুপচাপ অডিও বিশ্লেষণে।
যিনি অভিযোগ এনেছেন, তিনি বলছেন, সম্পর্কটা ছিল পেশাগত। অন্যজন বলছেন, ‘সে তো আমার কাছের মানুষ’। যেন একেকজন একেক নাটকের সংলাপে আটকে আছেন।
কিন্তু নাটকটা শুরু হয় আসল জায়গা থেকে। একটি অডিও ফাঁস। যা হতে পারত দুই ব্যক্তির সীমিত কথোপকথন, তা হয়ে গেল “জাতীয় শ্রবণ উৎসব”।
এখন কেউ প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার আগে তাই জিজ্ঞেস করে: তোমার ফোনের রেকর্ডিং অন না তো? ভালোবাসার এখন নানা আই-কানুনের অলিগলিও চেনা।।
একসময় সাংস্কৃতিক সেল মানে ছিল গান, আবৃত্তি, নাটক। এখন সেখানে চলে ইনবক্স তদন্ত, শব্দ বিশ্লেষণ ও চরিত্রচর্চা।
নারী শাখা, মহানগর কমিটি, সাংগঠনিক টিম সবাই চুপ। কারণ কেউ জানে না, কার কথায় কে আবার ‘পাবলিক স্টোরেজে’ উঠে যাবে। আর যিনি এই ঝড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘আমি একা লড়ছি’,
তিনি জানেন যে আজকাল একাকীত্বও লাইভে পরিণত হয়।
আমরা সাধারণ নাগরিকেরা ভাবি, দল গঠন না করে নাটকের দল করলে হয়তো নাটকগুলো একটু পরিশীলিত হতো।
এভাবে রাজনীতির ভেতর জন্ম নেয় আরেক রাজনীতি: ইনবক্স পলিটিক্স। কেউ বলেন “ঘনিষ্ঠ”, কেউ বলেন “লঙ্ঘন”, কেউ বলেন “চূড়ান্ত বক্তব্য”, আবার কেউ বলেন “আমার আর কিছু বলার নেই”। ।
এমন প্রেক্ষাপটে মোবাইল ফোন ও ফেসবুক মিলে তৈরি করেছে এক ধরনের ডিজিটাল ট্রায়াল থিয়েটার। যেখানে ন্যায় নির্ধারিত হয় না অভ্যন্তরীণ কমিটিতে, বরং কতটা ‘ভাইরাল’ হয়েছে তার ভিত্তিতে।
ডিসক্লেইমার: এই লেখাটি কারও ব্যক্তিগত দুঃখকে খাটো করে দেখা নয়—বরং বর্তমান রাজনীতির নাটকীয়তা, মোবাইল সংস্কৃতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ন্যায়ের বদলে ‘নোটিফিকেশন ট্রায়াল’-এর ট্র্যাজেডিকে ব্যঙ্গ-রসের চশমায় দেখা মাত্র।