করোনা সতর্কতায় কড়াকড়ি সব বন্দরে

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read

দেশের সকল নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হয়েছে করোনা সতর্কতা। রেল ও বাস টার্মিনালেও রাখা হচ্ছে কড়া নজর। স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে সকল যাত্রীদের মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। বিমানবন্দরে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের দিকে নজর দিতে হচ্ছে বেশি, কারণ সেখানে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বেড়েছে।

জানা গেছে, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সরঞ্জাম। আগাম সতর্কতা হিসেবে ভারত থেকে যেসব রুটের ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে, সেসব ফ্লাইটের সব যাত্রীর স্ক্রিনিং শুরু করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্রগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ইকুইপমেন্ট বসানোসহ করোনা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ জানান, পার্শ্ববর্তী দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও জোরদার করা হয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা। ভারত থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত সংখ্যক মাস্ক এবং পিপিই রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে আগত যাত্রীদের ইমিগ্রেশন প্রবেশপথে বসানো হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত নির্দেশনা ও সতর্কতা প্রচারও চলছে।’

অন্যদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক আগমনী হলে ইমিগ্রেশনের প্রবেশস্থলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সরঞ্জাম বসানো হয়েছে। থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে যাত্রীদের তাপমাত্রা নির্ণয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। টার্মিনালের স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহারের জরুরি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

শাহ আমানত বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আগমনী স্থলে ইমিগ্রেশন এ প্রবেশস্থলে হেলথ স্ক্রিনিং ইকুইপমেন্ট বসানো হয়েছে। বিমানবন্দরের মেডিক্যাল টিম কর্তৃক থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে নন টাচ পদ্ধতিতে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা নির্ণয় করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

‘এছাড়াও বিমানবন্দরে টার্মিনালের স্পর্শকাতর পয়েন্টসমূহে সকলকে মাস্ক ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে জরুরি নির্দেশনা। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত মাস্ক ও গ্লোভস মজুতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে’, উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে ভারতসহ যেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে, ওইসব দেশে ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রয়োজন ছাড়া ওইসব দেশে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব ভেরিয়েন্ট , বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সকল স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পরিচালক ফরহাদ হোসেন বলেছেন, সাধারণত গরম গুমোট আবহাওয়ায় করোনা ভাইরাস বেশি সংক্রমিত হয়। অন্যান্য বছরও মে মাস থেকেই করোনার প্রকোপ বেড়েছে, এ বছরও তাই হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩ জন। মে মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ জনে। আর জুন মাসের প্রথম আট দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন, এবং একজন মৃত্যুবরণ করেছেন।

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। সে কারণেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে।

দৈনিক ‘হিন্দুস্থান টাইমস’-এর খবরে বলা হয়, ভারতে একদিনে ৬ হাজার ১৩৩জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৭৮ জন নতুন রোগী। দেশটি কেরালা রাজ্যে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গেও সংক্রমণ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক নির্দেশে বেনাপোল স্থলবন্দরেও স্বাস্থ্যগত নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অন্যদিকে রেল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ঈদে ফিরতি ট্রেন যাত্রীদের মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

এর আগে, চলতি মাসের ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফরহাদ হোসেনের সই করা এক আদেশ জারি হয়। এতে সংক্রমণ এড়াতে দেশের সকল নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমূহে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *