২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে।
সোমবার বেলা ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিটিভিতে রেকর্ডকৃত ভাষণে এ বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি দেশের ৫৪ তম বাজেট।
বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ এবং আর্থিক শৃঙ্খলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার মুক্ত আবহে পেশ করল এ বাজেট। ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেও সরকার বাজেটে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ইতোমধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত জাতীয় বাজেট, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং অর্থ-বিল ২০২৫-২৬ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করা হয়েছে।
সোমবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।
এ বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেতন, ভাতা ও ভর্তুকির মতো খরচ চলতি অর্থবছরের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত বাজেটে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের নিচে রাখা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাজেটের আকার ছোট করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করবেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে বাজেট সম্পর্কে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেবেন। সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই, সেহেতু বাজেটের ওপর জুন মাসজুড়ে সংসদ সদস্যদের সাধারণ আলোচনার সুযোগ নেই বিধায় এবছর সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কিত মতামত নেবেন অর্থ উপদেষ্টা। দেশের যেকোনও নাগরিক বাজেট সম্পর্কিত যেকোনও মতামত যেকোনও উপায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারবেন।
এসব মতামতকে একত্রিত করে যা গ্রহণ করা সম্ভব, তা তিনি বাজেটে যুক্ত করে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠেয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবেন চূড়াস্ত অনুমোদনের জন্য। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে, যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
কৃষিতে ভর্তুকি দিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে না জানিয়ে এ বাবদ চলতি অর্থবছরের সমান ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভর্তুকিতে বরাদ্দ না বাড়ালে তারা বিপাকে পড়বে। কারণ, ইতোমধ্যে সুদসহ ভর্তুকির বকেয়া অর্থ দাবি করছে ঠিকাদাররা। ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়াতে তাই দেনদরবার করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশের নিচে রাখা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। তবে সরকার আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে এরই মধ্যে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বিবিএসএর সূত্রে বলছে, মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের ওপরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ চাপে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এক মাস আগে অর্থাৎ মার্চে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমে হয় ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।