হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব: প্রেস সচিব

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
বিমান দুর্ঘটনায় হতহতদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশের দাবি জানিয়ে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: শামীম-উস-সালেহীন/টাইমস

বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার  প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে সরকার পক্ষ হতাহতের সংখ্যা গোপন করছে বলে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরেই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা হতাহতের প্রকৃত তথ্য চেয়ে সচিবালয় ঘেরাও করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গুলিস্তান এলাকায়। এতে আহত হন অন্তত ৭৫ জন শিক্ষার্থী।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ফটো

এছাড়া হতাহতের প্রকৃত তালিকায় প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার ও প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে অন্তত ৯ ঘন্টার অবরোধ করে আটকে রাখে।

এমন আবহে শফিকুল আলম ফেসবুকে ওই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা মাইলস্টোন কলেজ পরিদর্শন করেছি শোকাহত পরিবার এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সাথেও দেখা করতে যারা এখনও এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শোকাহত, স্তব্ধ। সেখানকার পরিবেশ ছিল শোক ও ক্ষোভে ভারাক্রান্ত। অনেক শিক্ষার্থী সরাসরি তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জানিয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে অসঙ্গতির জন্য হতাশা প্রকাশ করেছে।’

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসের পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। ছবি: শামীম-উস-সালেহীন/টাইমস

‘সাংবাদিক হিসেবে আমি ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অসংখ্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা-দুর্যোগের ঘটনায় রিপোর্ট লিখেছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব। প্রাথমিকভাবে, কেউ নিখোঁজ থাকলে পরিবারগুলো সেটা রিপোর্ট করে। হাসপাতাল ও কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য জানায় এবং সেখান থেকে তারা তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে পায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই ঘটনায় মাইলস্টোন কলেজ নিখোঁজদের সনাক্ত করার জন্য সেদিনের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির রেকর্ড ক্রস-রেফারেন্স করতে পারে।’

‘স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য, দুজন উপদেষ্টা স্কুল কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। কন্ট্রোল রুম থেকে স্কুলের রেজিস্ট্রির তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে আহত এবং নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উপদেষ্টারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রমে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। আমরা আশা করছি কন্ট্রোল রুমটি আজ (বুধবার) থেকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সচিবালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেয়া হচ্ছে। সামরিক বাহিনীও এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, হতাহতের সংখ্যা কম করে দেখানোর কোনও কারণ সরকারের নেই,’ উল্লেখ করেন প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমরা স্কুলে নয় ঘন্টা কাটিয়েছি। যদিও আমরা আরও আগে চলে আসতে পারতাম, কিন্তু উপদেষ্টারা বলপ্রয়োগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সমাধান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তারা যত সময়ই প্রয়োজন হোক না কেন সেখানে অবস্থান করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আমরা পরিস্থিতি শান্ত ও শৃঙ্খল হওয়ার পরই সেখান থেকে বের হয়েছি।’

‘শিক্ষার্থী ও শিক্ষক যারা এ নির্মম দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মৃত্যুতে আমরা শোক জানাই। এটি একটি ন্যাশনাল ট্র্যাজেডি এবং তারা সকলেই শহীদ। আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ট্র্যাজেডি প্রতিরোধে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাই। সরকার জাতীয় নিরাপত্তা উন্নত করতে এবং বিমান-সম্পর্কিত দুর্যোগ শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,’ যোগ করেন প্রেস সচিব।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *