রাজস্ব সেবায় অচলাবস্থার আশঙ্কা

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
রাজস্ব ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার আন্দোলনরতরা। ছবি: টাইমস
Highlights
  • শনিবার থেকে পূর্ণ কর্মবিরতির পাশাপাশি ঢাকায় ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সব সহকর্মীদের যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টার সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের অর্ধদিবস কলমবিরতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যান।

টানা চতুর্থ দিনের উত্তাল পরিস্থিতি আরও বড় উত্তেজনার দিকে গড়ায়—আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সেবা ব্যতীত সব ধরনের রাজস্ব সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকি দেখা দেয়। কারণ, ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে অনড় রয়েছে।

পরিষদ জানায়, দাবি পূ রণ না হলে শনিবার থেকে পূর্ণ কর্মবিরতির পাশাপাশি ঢাকায় ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সব সহকর্মীদের যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপও কামনা করেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিসিএস (ট্যাক্স) ও বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) ক্যাডারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার সংক্রান্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

এখনো পরিষ্কার নয়, কোন পক্ষ আগে পিছু হটবে—এতে করেই নানা সংকটে থাকা ব্যবসায়ী সমাজের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

রাজস্ব ভবনের নিরাপত্তায় বৃহস্পতিবার সেনা মোতায়েন করা হয়। ছবি: টাইমস

দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী সপ্তাহে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আবারও আলোচনা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি কর্মকর্তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

একই প্রেস ব্রিফিংয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বৃহস্পতিবার রাতেই একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাজস্ব বোর্ডের ১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১৬ জন বৈঠকে অংশ নেন।

চার দিনের কয়েক ঘণ্টার কলমবিরতিতে ভোগান্তিতে পড়েন সেবা প্রত্যাশীরা, যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিতে শিডিউল পিছিয়ে পড়েন কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স বা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দপ্তরগুলোতে।

‘পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে। দ্রুত এর অবসান হওয়া উচিত, ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে,’ বলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান।

মাত্র ৭ শতাংশ কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে থাকা দেশের জন্য রাজস্ব ক্ষতির ঝুঁকি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

রাজস্ব ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার আন্দোলনরতরা। ছবি: টাইমস

অর্থনৈতিক সাংবাদিক ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান স্বীকার করেন যে, তার দপ্তরের সেবায় বিঘ্ন কিছুটা হলেও রাজস্ব সংগ্রহে প্রভাব ফেলছে।

যদিও তিনি ক্ষতির পরিমাণ ব্যাখ্যা করেননি, তবুও এনবিআরের দৈনিক গড় রাজস্ব আদায় হাজার কোটিরও বেশি। দেরিতে সেবা পাওয়ায় শুধু হয়রানি নয়, ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ও তাদের সহকর্মীরা দাবি করছেন, রাজস্ব আদায়ে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। কারণ, তারা অর্ধেক দিন স্বাক্ষর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

রপ্তানি ও আমদানি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং পূর্ণ কর্মবিরতির হুমকিতে তাদের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। মে মাসে এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) বিলুপ্তি সংক্রান্ত ১২ মে প্রজ্ঞাপনের পর কর্মকর্তারা ধর্মঘটে যান।

এতে বাজেট প্রণয়নের সময়সীমায় বিপত্তি ঘটায় সরকার ২৬ মে প্রজ্ঞাপনটি সংশোধনের ঘোষণা দেয় এবং ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানায়।

এদিকে, ওই সংস্কার কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব এবং সাম্প্রতিক ‘শাস্তিমূলক’ বদলি আদেশ বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি চলমান রেখেছে রাজস্ব কর্মকর্তা কর্মকর্তারা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *