রাজবাড়ীতে খেজুর চাষ, সফল উদ্যোক্তা কালাম

টাইমস ন্যাশনাল
4 Min Read
রাজবাড়ীতে কালাম মন্ডলের খেজুরের বাগান। ছবি: টাইমস
Highlights
  • ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমাদের দেশের মাটিতে বিদেশি জাতের খেজুর গাছে ফল আসবে না। এখন গাছের ফল দেখে অনেক আনন্দ লাগে। গাছে ফল ধরার ছয় মাস পরে তা খাবার উপযোগী হয়। আমি নিজেও আমার স্বামীর সঙ্গে বাগানে পরিচর্যা করি। গাছের খেজুর নিজে হাতে সংগ্রহ করে সবাইকে খাওয়াতে পেরে সত্যি খুবই আনন্দিত।’

সৌদি আরবের খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ফল। পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকা দেশগুলোতে এটির চাষ বেশি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশালসহ সারাদেশে কম-বেশি খেজুরের চাষ করা হচ্ছে। তবে, রাজবাড়ীতে ইউটিউব দেখে শখের বসেই খেজুরের বাগান গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তা কালাম।

তিনি রাজবাড়ী জেলা সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়নের খোসবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের মন্ডলের ছেলে। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রি হলেও একজন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। বর্তমানে তার গাছগুলোতে ধরে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আজওয়া, আম্বার ও বাহারি জাতের খেজুর।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিজ পৈত্রিক বসতভিটার আঙ্গিনায় ১৩ শতাংশ জমিতে চার জাতের ১৫টি বিদেশি খেজুরের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাগানটিতে ড্রাগন, আনার, কলা, আম, ত্বিন ফলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ঔষধি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছেই ঝুলছে কাচা-পাকা ফল। এসব গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কালাম। তার এই কাজে সহায়তা করছেন তার মা ও স্ত্রী।

কালাম মন্ডল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। ইউটিউব-ফেসবুকে দেখেছি সৌদি আরবে বিভিন্ন জাতের বিদেশি খেজুর আবাদ করা হয়। এসব খেজুর আমাদের দেশেও চাষ করা যেতে পারে ভেবে সৌদি প্রবাসী আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কিছু খেজুর সংগ্রহ করি। পরে বীজ থেকে চারা তৈরি করি। ২০১৯ সালে সেসব চারা দিয়ে নিজের ১৩ শতাংশ জমিতে বাগান গড়ে তুলি। রোপণের প্রায় ৩ বছর পর গাছে খেজুর ধরে। চলতি বছর অধিক পরিমাণে খেজুর ধরেছে। একেকটি গাছে ১০টি পর্যন্ত কাঁদি রয়েছে। যার প্রতিটি কাঁদি থেকে ৮ থেকে ১০ কেজি করে খেজুর পাওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত খেজুর বিক্রি করিনি। সবটুকু সংগ্রহ করেছি তা আমার প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত মানুষদের দিয়েছি। বর্তমানে অধিকাংশ গাছের গোড়া থেকে একাধিক চারা বের হয়েছে। সেসব গাছের গোড়ায় ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা হয়। কেউ আগ্রহী হলে আমি তাদের এসব খেজুরের চারা দিতে পারব।’ দেশে খেজুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে, এখনো দেশে খেজুরের চাহিদার পুরোটা আমদানি নির্ভর। তাই দেশে খেজুরের বাণিজ্যিক চাষাবাদ বাড়ানো গেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং অনেকের কর্মসংস্থানও হবে বলেও জানান তিনি।

কালাম মন্ডলের স্ত্রী ফাতেমাতুজ্জোহরা বলেন, ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমাদের দেশের মাটিতে বিদেশি জাতের খেজুর গাছে ফল আসবে না। এখন গাছের ফল দেখে অনেক আনন্দ লাগে। গাছে ফল ধরার ছয় মাস পরে তা খাবার উপযোগী হয়। আমি নিজেও আমার স্বামীর সঙ্গে বাগানে পরিচর্যা করি। গাছের খেজুর নিজে হাতে সংগ্রহ করে সবাইকে খাওয়াতে পেরে সত্যি খুবই আনন্দিত।’

প্রতিবেশী মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ রঙের খেজুর। এই খেজুর সৌদি খেজুরের চেয়ে স্বাদ ও মিষ্টতায় কোনো অংশে কম নয়। এই খেজুর বাগান দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা চারা কিনছেন।’

অপর প্রতিবেশী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে শুনেছি, এখানকার মানুষ সৌদি গিয়ে খেজুর বাগানে কাজ করে। সেই খেজুর বাগান দেখার ইচ্ছে ছিল। এখন বাড়ির পাশেই রাজমিস্ত্রী কালাম মন্ডলের বাড়িতে সেই বিদেশি খেজুর বাগান দেখলাম।’

নার্সারী ব্যবসায়ী মো. জালাল শিকদার বলেন, ‘কালাম মন্ডলের মতো দেশের বৃক্ষপ্রেমীরা যদি উন্নত জাত ও মানের খেজুরের আবাদ করেন তাহলে আমাদের দেশের খেজুরের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে। চলতি বছর কালাম মন্ডলের বাগানে সৌদি খেজুরের বাম্পার ফলন হয়েছে। এটি এই অঞ্চলের কৃষির জন্য নতুন সম্ভাবনা। আমি নিজেও বিদেশি জাতের খেজুরের গাছ ও চারার বাগান করেছি।’

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জনি খান বলেন, ‘আমি সরেজমিনে রাজমিস্ত্রি কালাম মন্ডলের বিদেশি খেজুরের বাগান পরিদর্শন করেছি। তিনি ১৩ শতাংশ জমিতে সৌদি খেজুরের বাগান গড়ে তুলেছেন। চলতি বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। এটি এই অঞ্চলের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এরই মধ্যে জেলাব্যাপী খেজুর চাষ ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করছি। নিয়মিত কৃষক ও উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *